টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও মেঘের গর্জন-এই তিনের সমন্বয় হলেই বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়বে কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছ। মা-মাছের ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে নদীর পাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। পাঁচ শতাধিক নৌকা নিয়ে জেলেরা আছে সেই অপেক্ষায়।
ইতোমধ্যে ডিম রাখার জন্য কুয়া প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা। প্রস্তুত করা হয়েছে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর পাত্রও। জেলেদের প্রত্যাশা, এবার কার্প জাতীয় মা-মাছ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ডিম পাওয়া যাবে। তবে গত দুই মাসে ৪টি মা-মাছ ও দেড় বছরে ২০টি শুশুকের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা জেলেরা।
গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) হালদা নদীর পোড়াকপালি প্রকাশ পুরায়িলা গেট এলাকা থেকে উদ্ধার করা মৃত প্রায় ১২ কেজি ওজনের ডিমধারী মৃগেল মাছটির শরীরে ৩টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, আঘাতজনিত কারণে মাছটির মৃত্যু হয়েছে। আঁশের কারণে বাইর থেকে তেমন দৃশ্যমান না হলেও, দেহের মাংসপেশি থেঁতলে গেছে। মাছটি এখনো ডিমে পরিপূর্ণ। হয়তো কয়েকদিন পর অনুকূল পরিবেশে নদীতে ডিম ছাড়ত।
হালদা নদীতে ৯ এপ্রিল খলিফারঘোনা এলাকায় ৮ কেজি ওজনের একটি মৃগেল (মা-মাছ), ৪ মার্চ অংকুরীঘোনা এলাকায় ১৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা (মা-মাছ) ও আমতোয়া এলাকায় ৪ কেজি ওজনের আইড় মাছ মরে ভেসে ওঠায় উদ্বিগ্ন নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা জেলেরা। এছাড়া গত দেড় বছরে ২০টি শুশুকের মৃত্যু তাদের আরো বেশি ভাবিয়ে তুলছে। এসব মা-মাছ ও জীববৈচিত্র্যের মৃত্যুর জন্য হালদা নদীর জেলে ও বিশেষজ্ঞরা নিষিদ্ধ যান্ত্রিকযানের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতকে দায়ী করেছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী মো. হারুন বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী ও তাদের নিষিদ্ধ যান্ত্রিকযান-ড্রেজারের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে মরে পঁচে ভেসে উঠছে হালদার মা-মাছ। অথচ এর কোনো সমাধান মিলছে না। দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ যান্ত্রিকযান ও ড্রেজার চলাচলের কারণে মা-মাছ হালদায় অবাধ বিচরণ করতে পারছে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই এ মৌসুমে মা-মাছ আশানুরূপ ডিম ছাড়বে কি না তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।
জয়নিউজ/পলাশ/আরসি