হঠাৎ করে ৪ সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার ঘটনায় বিএনপিতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্ত বদল করে কোন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শপথ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন- তা নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জয়নিউজকে জানিয়েছেন, তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্যদের একবার জানানো উচিত ছিল। কারণ বিএনপি সংসদে যোগ দিয়েছে বিষয়টি খোদ দলের মহাসচিব জানতেন না। এ তো ভয়াবহ অবস্থা । এভাবে তো দল চলে না। দলের সিদ্ধান্ত দলের মহাসচিব জানাবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু মহাসচিব জানালেন শপথের পর। বিষয়টি বিএনপির জন্য লজ্জার।
তাঁরা মনে করেন, বিএনপি লুকোচুরি করে যেভাবে সংসদে যোগ দিল তাতে কর্মীদের মনে আঘাত আসবে। তাদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে। কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হবে। আবার কেউ কেউ দলছুট হবে। আদর্শ ও একতা না থাকলে দলে বিভাজন আসবে- এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে দলের কর্মী থেকে নেতা এখন আর কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চাইবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রবীণ সদস্য বলেন, বিএনপি যে লন্ডন থেকে পরিচালিত হয় এটা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। এখন আওয়ামী লীগ জোর গলায় বলবে বিএনপিতে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই।
এদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সংবাদ সম্মেলনে শপথ ইস্যুতে তাঁর বিব্রত হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেছেন, আমাকে আপনারা (সাংবাদিকদের) বিব্রত করবেন না। দয়া করে বুঝে নিন।
সবমিলিয়ে বিএনপির চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে দাবি করেছেন খোদ বিএনপির সিনিয়র নেতারাই ।
২৯ এপ্রিল ৪ সদস্যের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই শপথ নিলেন। বগুড়া-৬ আসন থেকে বিজয়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো শপথ নেননি। জানা গেছে, তিনি শপথ নিতে কিছুদিন সময় চেয়ে স্পিকার বরাবর আবেদন করেছেন। তবে বিষয়টি গোপন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে তিনি শপথ নেবেন। তাঁকে শপথ নিতে ২৯ এপ্রিল বিকালে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুঠোফোনে অনুরোধ করেছেন। তবে শপথ নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সময় চেয়ে তিনি ২৯ এপ্রিল শপথ নিতে পারবেন না বলে তারেক রহমানকে জানিয়ে দেন। মূলত দলের মহাসচিব শপথ নেবেন না এমনটি জানার পর তারেক রহমান বাকি ৪ সদস্যকে শপথ নেওয়ার অনুমতি দেন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বারবার শপথ না নেওয়ার কথা বলে হঠাৎ করে শপথ গ্রহণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিএনপি। কারণ এর ফলে সরকারের সব চাওয়া পূর্ণ হবে। বৈধতা পাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। শুধু তা-ই নয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে তারা। এখন বিএনপির মহাসচিবেরও উচিত শপথ নেওয়া । তা না হলে সংসদের ভেতরে বিএনপির এমপিদের অবস্থা লেজে-গোবরে হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জয়নিউজকে বলেন, বল প্রয়োগ করে বিএনপিকে শপথ নিতে বাধ্য করেছে সরকার। আমরা শপথ নিতে চাইনি। তবে দলের সিদ্ধান্তেই বিএনপি সংসদে যোগ দিয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো কারণ নেই।
জয়নিউজ/আরসি