বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। উন্নয়নের ছোঁয়ায় নানামুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু সুবিশাল এই এলাকায় নেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে উচ্চশিক্ষারও উন্নয়ন করতে হবে। খোদ শিক্ষা উপমন্ত্রীও মনে করেন- হ্যাঁ, দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা আছে। বিস্তারিত জানুন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক কাউছার খানের প্রতিবেদনে
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে শহর ছাপিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও। কর্ণফুলীতে টানেল নির্মিত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যাবে আরো। অথচ অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি, সুদূর টেকনাফ থেকে শুরু করে পটিয়া পর্যন্ত সুবিশাল এলাকায় নেই কোন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়!
এই দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জয়নিউজকে বলেন, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে আরও কিছু সরকারি স্কুল করা যায় কি-না সে চেষ্টা করব।
বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী টানেলসহ শিল্প ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম। চায়না ইকোনমিক জোন, এলএনজি টার্মিনাল, পারকি সৈকতে পর্যটন কমপ্লেক্স, কেইপিজেডে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন, বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী ও আনোয়ারার বিভিন্ন এলাকায় বড় গ্রুপের শিল্প বিনিয়োগে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠছে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি হলেও শিক্ষা খাতে এখনও পিছিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। দেশের অন্যতম প্রধান দুই বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অবস্থান উত্তর চট্টগ্রামে। কিন্তু দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সংখ্যার হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাস্টার্স সমমান কলেজের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। কিন্তু সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ার সুযোগ পান।
উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতার এই কঠিন সময়ে চট্টগ্রামের অন্য দুই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট সংখ্যা অতি নগণ্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি বছর আনুমানিক আড়াই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যার ফলে চট্টগ্রাম এবং এর আশপাশে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় স্বাক্ষরতার হার ৫৮.৯০%। ৪১ ওয়ার্ডের একটি সিটি করপোরেশন, ১৫টি উপজেলা, ৩২টি থানা (উপজেলায় ১৬টি ও ১৬টি মেট্রোপলিটন থানা), ১৪টি পৌরসভা, ১৯০টি ইউনিয়ন, ৮৯০টি মৌজা, ১ হাজার ২৬৭টি গ্রাম ও ১৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এর জন্য তিনটি মাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮টি। যার মোট সিট সংখ্যা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীর তুলনায় অনেক কম। তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে এখানকার শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ইশতিহারে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গ্রাম হবে শহর। তাই গ্রামকে শহর করতে হলে আগে উন্নত ও উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে রয়েছে কর্ণফুলী নদী। এই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। এর মধ্যে চট্টগ্রামবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দিয়েছেন দেশের প্রথম কর্ণফুলী টানেল। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’গড়ে তুলতেই কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শত শত বছরের ঐতিহ্যের অধিকারী। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বণিকরা এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বেড়েছে।
সবমিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি এ অঞ্চলের মানুষের অনেক আগে থেকেই। অতএব দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে জয়নিউজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম পটিয়া উপজেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করব। উত্তর চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। পটিয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও কক্সবাজার জেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব এলাকার শিক্ষার্থীরা সহজে আসা যাওয়া করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সংগঠনের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাংগঠনিক ও দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু জয়নিউজকে বলেন, পৃথিবীর সম্ভাবনাময় দুটি অর্থনৈতিক জোট সার্ক ও আশিয়ানের সংযোগস্থল চট্টগ্রাম। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি এ শহরের শিক্ষার উন্নয়নের গুরুত্ব অনেক বেশি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে অনেক উন্নত স্কুল এবং কলেজ। প্রতি বছর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এসব স্কুল এবং কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি অর্জন করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় উত্তর চট্টগ্রামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে নেই কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।