ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে কুতুবদিয়া দ্বীপে শুক্রবার জোয়ারের পানিতে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুতুবদিয়ার ইউএনও দীপক কুমার রায় জয়নিউজকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্লাবিত এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও আরো জানান, শুক্রবার সকালে ও বিকালে উপজেলা প্রশাসন বেড়িবাঁধ ভাঙন এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে মাইকিং করে নিবাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা জানান, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর,আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, কাহারপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজাখালী,আজম কলোনী, মলমচর,উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলার পাড়া,বাতিঘর পাড়া, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, ফয়জানিরবাপের পাড়া, পূর্ব নয়াকাটা, উত্তর সতর উদ্দিন, পেয়ারাকাটা ও ক্রসডেম বিসিক এলাকায় জোয়ারের নোনা পানি ডুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পশ্চিম তাবলরচর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লুৎফরন্নেছা (৫৬) জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর অমাবশ্যার জোয়ারের প্রভাবে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ জয়নিউজকে জানান, দুই শতাধিক ঘরবাড়ি,শত শত একর পাকা ধানের ফসল প্লাবিত এবং শত শত একর লবণ চাষের কয়েক হাজার মেট্রিকটন লবণ তলিয়ে গেছে। এতে সাধারণ কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক নেতা মাহাবুব আলম সিকদার বলেন, বৈশাখে পুকুর,মাঠ,খাল-বিল ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ফণীর প্রভাবে কুতুবদিয়া দ্বীপে জোয়ারে নোনা জলে লোকালয় তলিয়ে গেছে। নোনা জলে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে বায়ুবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে জনবসতির ছেয়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র তুলনামূলক কম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে মানুষের দুর্ভোগ চোখে পড়ার মতো।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, কুতুবদিয়া উপকূলের কৃষকেরা বুঝতে পারেনি এভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে চলে আসবে। জোয়ারের প্রভাবে উপকূলের কৃষক ও লবণচাষীদের কোটি কোটি টাকার ফসল ও লবণ নষ্ট হয়েছে। দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙা রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, পূর্বে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা ছিল। বিগত দুই বছর পূর্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় একশ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও যথাসময়ে কাজ করেনি। তবে বেশী ভাঙন এলাকায় জোয়ার রক্ষার জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে জোয়ার ঠেকানোর জন্য কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পশ্চিম তাবলরচর এলাকা ভাঙন বাঁধে জরুরিভিত্তিতে জোয়ার ঠেকানোর জন্য মাটি দিলেও তা ঘূর্ণিঝড় ফণী ও অমাবশ্যার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তা তলিয়ে গেছে।