পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভা ভোট উৎসব চলছে। নানা প্রতিশ্রুতি, পাল্লাপাল্টি অভিযোগ, কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মাওবাদী হামলায় বিধায়কের মৃত্যুর মত ঘটন অঘটন পেরিয়ে ভারতে এই চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধ চলছে। ভোটের হাওয়া এখন তুঙ্গে।
মাঝে ফণী ঘূর্ণিঝড় এসে সপ্তাহখানেকের জন্য ছন্দপতন ঘটালেও ৯০ কোটি ভোটারের এই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নির্বাচন। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি, বিবিসি ও জি নিউজ।
জানা গেছে, ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনে ভোট হবে। সরকার গঠন করতে হলে অন্তত ২৭২টি আসন পেতে হবে যে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটকে। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সব ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে ২৩ মে হবে গণনা; সেদিনই জানা যাবে, কে বসছেন দিল্লির মসনদে।
বিবিসি লিখেছে, ভারতের এবারের সাধারণ নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীর গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে। কারণ পুরো ভারতজুড়ে মোদি আর মোদি।
মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরাতন দল ভারতীয় কংগ্রেসের, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী।
এদিকে ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। বিভিন্ন জরিপে জয়ের ক্ষেত্রে বিজেপিকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। জরিপে আভাস মিলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সাপেক্ষে বিজেপির আসন কমবে, তবে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটাররাই নির্ধারণ করবেন দিল্লির মসনদে কে বসবেন? সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত। এদিন ফল প্রকাশের কথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ফের নির্বাচনি প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, চারদিকে মানুষের উন্মাদনা দেখে দিদির ঘুম ছুটে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ‘স্পিড ব্রেকার দিদি’ রাতে ঘুমাতে পারছেন না। মোদি মনে করেন, দিদিকে ‘সবক’ শেখানোর জন্য পশ্চিমবাংলায় ‘কমল’ ফুটবে। যত বেশি পদ্ম ফুটবে, ততই জবাব পাবেন দিদি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কবেই বলে দিয়েছেন, ৪২-এর ৪২টাই চাই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অঙ্কটা যে এবার এত সহজ হবে না, সে কথা দিদিকে পদে পদে বুঝিয়ে দিচ্ছে বিজেপি। পাল্টা দাবি তুলে ভোটের বাজার গরম করে রেখেছে গেরুয়া শিবির। কেউ বলছেন ২০, কেউ বলছেন ২৩, কেউ বা বুক ঠুকে বলে দিচ্ছেন বাংলার ৩০ আসনে জয়ের পতাকা ওড়াবে নরেন্দ্র মোদির দল।
বস্তুত প্রায় ৮ বছর ধরে ছোট-বড় মাঝারি সব নির্বাচনে তৃণমূলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য এই বঙ্গদেশে। তবে বলা বাহুল্য, এই ভাবমূর্তিতে তাল কেটে যায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে। লাগামছাড়া সন্ত্রাস আর বেনজির জোরজবরদস্তির সেই নির্বাচনে তৃণমূলই অধিকাংশ পঞ্চায়েত দখল করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই ডামাডোলের ভোটেও বিজেপির উত্থানের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন দেশের প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। গতবারের চেয়ে এবার ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। ১৩ কোটি নতুন ভোটার এবার নির্বাচণি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তবে ২০১৪ সালে নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ভারতীয় ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ৩৫ বা তার চেয়ে কম। এবারের নির্বাচনে ডিজিটাল মিডিয়ার প্রভাব খুবই বেশি।
জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আয়তনের দিক থেকে সপ্তম ভারতের ভোটে অংশ নিচ্ছে ৪৬৪টি দল। প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এবার সারাদেশে প্রায় দশ লাখেরও বেশি গণনাকেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বের হিসেবে এটা একটি রেকর্ড!
লেখক: যুগ্ম সম্পাদক ও সিইও, জয়নিউজবিডি