উইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে শাই হোপ এবং সুনিল অ্যামব্রিস মিলে গড়েন ৮৯ রান। এরপর তৃতীয় উইকেটে রস্টোন চেজকে সঙ্গে নিয়ে হোপ গড়েন ১১৫ রানের জুটি। তবে শেষদিকে বাংলাদেশি বোলারদের আক্রমণের মুখে আর দাঁড়াতে পারেনি তেমন কেউ। ফলে ২৬১ রানে ইনিংস শেষ করে উইন্ডিজ।
মঙ্গলবার (৭ মে) ডাবলিনের ক্যাসেল এভিনিউতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে রীতিমতো টাইগার বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম ঘণ্টায় ১৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৫ রান তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা।
তবে তাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা এতোটা সহজ ছিল না। ইনিংসের প্রথম বলেই চার হাঁকালেও দুই ডান হাতি পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মাশরাফি বিন মর্তুজার মাপা লাইন-লেন্থের বিরুদ্ধে শুরুর দিকে ধুঁকতে হয়েছে হোপ-অ্যামব্রিসকে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলেই অ্যামব্রিসের বিপক্ষে লেগ বিফোরের শক্ত আবেদন করেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু আম্পায়ার নাকচ করে দেন সে আবেদন। প্রথম ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৮ রান।
১১তম ওভারে প্রথমবারের মতো মোস্তাফিজুর রহমান আক্রমণে এলে হাত খুলে খেলার সুযোগ পান দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। তবে বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান সাধ্যমতো চেষ্টা করেন রানের চাকা আটকে রাখার। সাকিবের এ প্রচেষ্টার সুফল ভোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে অ্যামব্রিসকে শর্ট কভারে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে প্রতিশোধ নেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৪টি বাউন্ডারি মেরে ৫০ বলে ৩৮ রান করেছেন অ্যামব্রিস।
ঠিক পরের ওভারেই ড্যারেন ব্রাভোকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব আল হাসান। ব্রাভো আউট হয়েছেন ৪ বলে মাত্র ১ রান করে।
পরপর দুই উইকেট পড়লেও তৃতীয় উইকেটে রস্টোন চেজকে নিয়ে ফের লম্বা জুটি গড়েন শাই হোপ। আড়াই বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছতে ৫৩ রানের প্রয়োজন ছিলো শাই হোপের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭০ রানের ইনিংস খেলায় আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশের বিপক্ষেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টাইগারদের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের দুই হাজার রানও পূরণ করে ফেলেছেন হোপ। একইসঙ্গে ভেঙে দিয়েছেন দুই সাবেক ক্যারিবীয় তারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার রেকর্ড।
এতদিন ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে ২০০০ ওয়ানডে রান করার রেকর্ড ছিলো স্যার ভিভের। তিনি করেছিলেন ৪৮ ইনিংসে। আজ নিজের ৪৭তম ইনিংসেই ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন শাই হোপ। নিচে নামিয়ে দিলেন কিংবদন্তি ভিভকে।
তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যাওয়া হয়নি হোপের। মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত শেষ স্পেলে কক্ষচ্যুত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যেখানে ৩০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ উঁকি দিচ্ছিল, সেখানে মাশরাফির দারুণ বোলিংয়ে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ৪১তম ওভারে প্রথম ৫১ রান করা চেজকে ফেরান মাশরাফি। বড় শট খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন চেজ। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই সেঞ্চুরিয়ান হোপকে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন টাইগার অধিনায়ক।
আউট হওয়ার আগে ১১ চার এবং ১ ছক্কার মারে ১৩২ বলে ১০৯ রান করেন হোপ। উইকেটে আসেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। মাশরাফির প্রথম বলেই চার হাঁকান তিনি। তবে পরের বলেই তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২ উইকেটে ২০৫ থেকে ৫ উইকেটে ২১১ রানের দলের পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ৪৫তম ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন সাইফউদ্দিন, ফিরিয়ে দেন অভিষিক্ত শেন ডাওরিচকে। তবু মোস্তাফিজের লাইন-লেন্থহীন বোলিংয়ের ফায়দা নিয়ে রান করতে থাকেন অ্যাশলে নার্শ এবং জোনাথন কার্টার। ৪৮তম ওভারে ৭ উইকেটে ২৫০ পূরণ হয় তাদের।
শেষ দুই ওভারে আরও ১১ রান নিয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে ২৬১ রানে নিয়ে ঠেকায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফির ৩ উইকেট ছাড়াও ২টি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজ। দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব নেন ১টি করে উইকেট।