অবিশ্বাস্য এক রাত কাটিয়েছে ফুটবল ভক্তরা। সঙ্গে দেখেছে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ। যেখানে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে লিভারপুল। বার্সেলোনার মতো দলকে ফিরতি লেগে ৪-০ ব্যবধানে অর্থাৎ একহালি গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে অলরেডরা। এর আগে প্রথম লেগে বার্সেলোনার কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল লিভারপুল।
এই ম্যাচে ছিলেন না লিভারপুলের প্রাণভোমরা মোহাম্মদ সালাহ। ছিলেন না আরেক তারকা রবার্তো ফিরমিনো। কিন্তু লিভারপুলের শক্তিমত্তার দুই-তৃতীয়াংশের সমান এই দুই তারকাকে ছাড়াই জার্গেন ক্লপের শিষ্যরা মেসি-সুয়ারেজদের মতো গোল মেশিনকে আটকে রেখেছে। পাশাপাশি তাদের জালে চার-চারবার বল জড়িয়েছে। তাইতো কোচ ক্লপ মনে করেছেন তার শিষ্যরা কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলো তিনি নিজেও জানেন না।
ইউরোপিয়ান কাপ কিংবা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে লিভারপুল হল তৃতীয় কোনো দল যারা সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ফাইনালে উঠেছে। তাদের আগে ১৯৭০-৭১ মৌসুমে গ্রিসের ক্লাব পানাথিনাইকোস ও ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে বার্সেলোনা এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছিল।
লিভারপুলের এমন জয়ে দুটি করে গোল করেছেন ডিভোক অরিগি ও জিওর্জিনিও ওয়ানাইল্ডাম। আয়াক্স আমস্টারডাম ও টটেনহ্যাম হটস্পারের মধ্যকার বিজয়ী দলের বিপক্ষে ফাইনালে খেলবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা প্রত্যাশী লিভারপুল। ওই ম্যাচে আয়াক্স অবশ্য প্রথম লেগে ১-০ গোলে এগিয়ে রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে বার্সেলোনার বিপক্ষে লিড নিতে বেশি সময় নেয়নি লিভারপুল। ম্যাচের ৭ মিনিটেই তারা এগিয়ে যায়। এসময় বার্সার জর্ডি আলবা হেড থেকে উড়ে আসা বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। তার পায়ে লেগে বল চলে আসে লিভারপুলের হেন্ডারসনের কাছে। তিনি শট নেন। তার নেওয়া শট বার্সেলোনার গোলরক্ষক আন্দ্রে টার স্টেগান ডানদিকে ঝাপিয়ে পড়ে ডান হাত দিয়ে রুখে দেন। কিন্তু বল তার হাত ছুঁয়ে চলে যায় অরিগির কাছে। তিনি ডান পায়ের আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি (১-৩)। প্রথমার্ধে অবশ্য এই একটি গোলই হয়েছে।
অবশ্য বার্সেলোনা প্রথমার্ধে গোল শোধের বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। তার মধ্যে লিওনেল মেসি দুই দুইবার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন। আর জর্ডি আলবা প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোলমুখে শট নিলেও সেটা লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বিপদমুক্ত করেন।
বিরতির পর আরো তিনবার বার্সেলোনার জালে বল জড়ায় লিভারপুল।
দ্বিতীয়ার্ধে ইনজুরিতে পড়া অ্যান্ডি রবার্টসনের পরিবর্তে মাঠে নামেন জিওর্জিনিও ওয়ানাইল্ডাম। তিনি এসে লিভারপুলের ভাগ্য বদলে দেন দারুণভাবে। মাঠে নেমেই দুই মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে তিনি লিভারপুলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে টেনে তোলেন।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে তিনি প্রথম গোলটি করেন। এ সময় ডানদিক থেকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের বাড়িয়ে দেওয়া বলে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট নেন ওয়ানাইল্ডাম। তার নেওয়া শট রুখে দেওয়া উচিত ছিল স্টেগানের। কিন্তু বল প্রথমে তার হাতে লেগে, তারপর বগলের নিচ দিয়ে গোললাইন অতিক্রম করে (২-৩। ৫৬ মিনিটে বামদিক থেকে জাদরান শাকিরির ক্রসে ডি বক্সের ভেতরে লাফিয়ে উঠে হেড দিয়ে জালে পাঠান তিনি (৩-৩)।
চতুর্থ ও শেষ গোলটি লিভারপুল আদায় করে নিয়েছে চাতুর্যতার সহিত। এ সময় কর্নার পায় লিভারপুল। কর্নার কিক নিতে যান আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড। তিনি দেখতে পান তখনও বার্সার রক্ষণভাগ নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সেই সুযোগে নিচু শটে তিনি ডি বক্সের মধ্যে থাকা অরিগিকে বল বাড়িয়ে দেন। সজাগ থাকা অরিগি কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে ডান পায়ের শটে জালে জড়ান বল (৪-৩)।
আর উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা অ্যানফিল্ড। কারণ, তারা যে অসম্ভবকে সম্ভব করে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই শেষ হয় ম্যাচ। এরফলে বার্সেলোনা বিদায় নেয় শেষ চার থেকে। আর লিভারপুল টানা দ্বিতীয়বারের মতো পৌঁছে যায় ফাইনালে।