ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় ঠিক ঠিক মূল্যতালিকা ঝুলে থাকে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সব দোকানে। দিন গড়িয়ে অভিযান শেষ হলেই পাল্টে যায় মূল্যতালিকা। পেছনের পাতা উল্টে মূল্যতালিকা হয়ে যায় ক্যালেন্ডার!
সরেজমিনে দেখা যায়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের একাধিক মুরগির দোকান, মুদির দোকান, চালের আড়তে নেই মূল্যতালিকা। এখানকার নিয়মিত ক্রেতারা জানান, ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে আসার আগে লুকিয়ে রাখা মূল্যতালিকা বের করে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও দেখা গেছে একই চিত্র।
রিয়াজউদ্দিন মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জমির হোসেনের রয়েছে একাধিক দোকান। তার মালিকানাধীন দুটি মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, একটিতেও মূল্যতালিকা টাঙানো নেই ।
প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য দোকান থেকে মূল্যতলিকা আনতে পাঠানো হয় দোকানের সহকারীকে।
মূল্যতালিকা নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে দোকানের ম্যানেজার সুজন প্রতিবেদকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দোকানের মালিক জমিরের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এসময় অন্য দোকানে অবস্থান করছিলেন জমির হোসেন। প্রতিবেদক তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জমির দোকানে এসে দাবি করেন শুধু তার দোকানেই নয়, বাজারের প্রায় দোকানেই মূল্যতালিকা নেই।
পাশের আবদুল্লাহ স্টোরেও গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। মূল্যতালিকা নেই কেন- এমন প্রশ্নে দোকানের ক্যাশিয়ার মাসুদুল আলম ও কর্মচারী মোক্তার প্রতিবেদকের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন। পরে দোকানের পেছনের গোডাউন থেকে আগে লেখা একটি মূল্যতালিকা নিয়ে আসেন। যেখানে অধিকাংশ পণ্যের দামও লেখা ছিল না।
যোগাযোগের জন্য আবদুল্লাহ স্টোরের মালিকের পরিচয়-ফোন নম্বর চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান কর্মচারী মোক্তার।
চালের দোকান জামাল স্টোরেও বিক্রি হচ্ছিল ভালোই। কিন্তু যথারীতি সেখানেও মূল্যতালিকার দেখা মেলেনি। মূল্যতালিকা নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে দোকানদার বলেন, আমার ভাই কোথায় রেখে গেছেন, এখন পাচ্ছি না।
দোকানে থাকা রহিম কথা বলার ফাঁকেই প্রতিবেদকের অগোচরে ক্যালেন্ডার উল্টে ফেলেন। দেখান মূল্যতালিকা। যদিও এরমধ্যেই ক্যালেন্ডার থেকে মূল্যতালিকা পাল্টানোর এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে নেন জয়নিউজের প্রতিবেদক।
ছবি দেখালে দোকানের ম্যানেজার রহিম ভুল স্বীকার করে এরপর থেকে মূল্যতালিকা লাগাবেন বলে কথা দেন।
রহমতগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা মো. হায়দার জয়নিউজকে বলেন, আপনিতো নিজের চোখেই দেখলেন কী ধোঁকাবাজি চলছে। আমরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে আছি এদের কাছে। প্রশাসনের অভিযানের আগে দোকানদার সব ঠিকঠাক করে রাখেন। অভিযান শেষ হলেই সব পাল্টে যায়। এদের কঠোর শাস্তি দেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, আপনারা জানেন আমরা রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সতর্কও করেছি। এরপরও যদি তারা এসব প্রতারণা করে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিব।