নগরের টেরিবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
ঈদকে সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাইপণ্য বাণিজ্য। প্রতিবছর ভারতীয় শুল্কবিহীন পণ্য আটক করতে প্রশাসন তৎপর থাকলেও, এবার এ ব্যাপারে তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।। জানা যায়, প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে চলছে এ বাণিজ্য।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টেরিবাজারে ম্যাগা মার্ট, মনে রেখো, মল ২৪, সানা, রাজপরী, মাসুদ ক্লথ স্টোরস, খাজানাসহ বিভিন্ন শপিংমল এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। এছাড়াও রিয়াজউদ্দীন বাজার ভারতীয় কাপড় ও কসমেটিকসে সয়লাব।
এই দুইটি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য ক্রয় করে নগরের বিভিন্ন ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতানে বিক্রি করছে। এছাড়াও নগর থেকে বাইরে প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। বলা যায়, ভারতীয় পণ্যের দখলে এখন পুরো বন্দরনগরী।
জানা যায়, ক্রেতাদের ভারতীয় পণ্যে চাহিদা থাকায় অধিক লাভের উদ্দেশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধপথে সীমান্ত দিয়ে এ পণ্য নিয়ে আসছে। লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকে লাভ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী।
ভারত–বাংলাদেশের শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় ভারতীয় পণ্য এ দেশে বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না। পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লাখ লাখ টাকার শাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নগরের তামাকুমণ্ডি লেইন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এর কোনোটাই বৈধপথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে এসব পণ্য। আর এর মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডিতে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী বর্ডারবাজার এলাকার একাধিক চোরাকারবারি জয়নিউজকে জানান, শুল্ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করলে দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পড়ে। তাই ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারিদের দিকেই ঝুঁকে।
তিনি জানান, ফেনীর ৩৮ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে চোরাকারবারিরা সক্রিয়। প্রতিদিন এ সীমান্তপথ দিয়ে ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন কাপড়ের চালান আসছে। এসব চোরাকারবারে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ের সরকারদলীয় নেতারা। পুলিশ, বর্ডার গার্ড ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তাদের তালিকা থাকলেও এ চক্রকে ধরা হচ্ছে না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আমরা এখন নিত্যপণ্য বিষয়ে বাজার মনিটরিংয়ে ব্যস্ত। বিসিএস পরীক্ষার কারণে আমাদের এখন লোকবল সংকট রয়েছে। ১৫ রমজানের পর থেকে কাপড়ের বাজারে অভিযান চালাবো। যেখানে শুল্কবিহীন কাপড় পাব সেগুলো আটক করব। যাতে সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যে কাপড় কিনতে পারে সেই উদ্যোগ নেব।
জয়নিউজ/আরসি