চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এই মতবিরোধের জের ধরে জেলা আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমপিদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ইউনিট সম্মেলনের আয়োজন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আওতাধীন ৮টি উপজেলার মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। বাকি চারটি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই দীর্ঘদিন। এগুলো হলো আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বোয়ালখালী ও বাঁশখালী। এরমধ্যে বাঁশখালীতে কমিটি হয়নি দুই যুগ ধরে। ২০১৪ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটি আছে এখন কাগজপত্রে।
বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বৈত আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। চার বছর আগে এ দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। দুই বছর আগে দুই উপজেলায় তিনমাস মেয়াদি এই কমিটি গঠন করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চার উপজেলার তিন সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলীয় নেতাদের মতবিরোধের কারণে এতদিন ধরে কমিটি গঠন করতে পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ। বোয়ালখালী উপজেলার সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল জাসদ নেতা হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যে কারণে তাঁর সঙ্গেও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মতবিরোধ আছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দক্ষিণ জেলার ৭ সংসদ সদস্যের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নানা বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে এ দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর এমপিদের সঙ্গে নেতৃবৃন্দের পুনরায় দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
গত ১১ মে চট্টগ্রামের ৭ সাংগঠনিক জেলার বিশেষ বর্ধিত সভায় সংসদ সদস্যদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
মোছলেম উদ্দিন আহমদ কোনো সংসদ সদস্যের নাম না নিয়ে অভিযোগ করেন, এমপিদের ইচ্ছেমত উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চলে। তিনি এমপিদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে রাখতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রস্তাবও রাখেন। বিশেষ এ বর্ধিত সভায় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামের ৭ জেলার ইউনিট সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। দক্ষিণ জেলার এমপিদের সঙ্গে জেলা নেতাদের মতবিরোধের কারণে সম্মেলন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ জয়নিউজকে বলেন, ‘সব সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ নেই, কয়েকজনের সাথে আছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা সম্মেলনের ব্যবস্থা করব। এমপিরা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নেব’।
অপরদিকে এমপিদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সম্মেলন করাটা চ্যালেঞ্জ মনে করেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ‘কয়েকজন এমপি তাদের ইচ্ছেমতো সংগঠন পরিচালনা করতে চায়। তারা আমাদের সিদ্ধান্তের ধার ধারেন না। ইউনিট সম্মেলন করার ক্ষেত্রে তাদেরকে আমাদের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।’
জয়নিউজ/আরসি