চট্টগ্রাম ওয়াসার কোটি কোটি টাকার পানির হিসাব মিলছে না। হিসাবের এ গরমিল হচ্ছে প্রতি মাসেই।
কর্তৃপক্ষের দাবি, সংকট সমাধানে কাজ চলছে। তবে যে বিভাগ নিয়ে এত আলোচনা, সে বিভাগেই নেই গরমিলের কোনো তথ্য!
জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসায় প্রতি মাসেই বড় অংকের বিলের টাকা অনাদায়ী থেকে যায়। এর বাইরে আরেকটি বড় অংকের পানির বিল ওয়াসা কোনোদিন কারো কাছে চাইতে পারে না। ওয়াসায় এই হিসাব না থাকা পানিকে বলা হয় নন রেভিনিউ ওয়াটার (এনআরডব্লিউ)।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চুরি, লিকেজ কিংবা সিস্টেম লসের কারণে পানির কোনো হিসাব পাওয়া না গেলে সেই টাকা এনআরডব্লিউ খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জয়নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
ওয়াসার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এনআরডব্লিউ ছিল মোট উৎপাদিত পানির ৩০ শতাংশ। যা টাকার মূল্যে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে এনআরডব্লিউ ছিল ৩০ শতাংশ। যা টাকার মূল্যে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৭২৩ টাকা।
একইভাবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৬ শতাংশ, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৩১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ২৩ শতাংশ, মার্চে ২৫ শতাংশ, এপ্রিলে ২৫ শতাংশ, মে-তে ২৮ শতাংশ, জুনে ২২ শতাংশ, জুলাইয়ে ২২ শতাংশ, আগস্টে ১৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ, অক্টোবরে ১৫ শতাংশ ও নভেম্বরে ২৪ শতাংশ।
এমন অভিযোগও রয়েছে, ওয়াসার কয়েকজন প্রকৌশলী ইচ্ছাকৃতভাবে কাগজে-কলমে উৎপাদন বেশি দেখাচ্ছেন, যে কারণে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজস্ব বিভাগকে।
রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, নগরীতে এখনো রয়েছে অসংখ্য লিকেজ। যে কারণে পানি পাইপ ফেটে রাস্তায়-নালায় গিয়ে পড়ছে। এছাড়া চুরি, মিটার বাইপাস, অবৈধ মিটার, মিটারবিহীন সংযোগ, অনুমোদনহীন সংযোগ ছাড়াও হাজার হাজার নষ্ট মিটারের কারণে প্রতি মাসে বেড়ে যাচ্ছে নন রেভিনিউ ওয়াটারের পরিমাণ।
রাজস্ব বিভাগের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, বর্তমানে ওয়াসা দৈনিক পানি উৎপাদন করে ৩৬ কোটি লিটার। দৈনিক ৩০ শতাংশ পানি যদি পাইপ ফেটে বেরিয়ে যায় তাহলে প্রতিদিন নষ্ট হবে ১০ কোটি ৮ লাখ লিটার। এই পরিমাণ পানি যদি নগরের কোথাও পাইপ ফেটে বেরিয়ে যায়, তাহলেতো জনজীবন অচল হয়ে পড়বে।
ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে তিনটি করে মোট ১২টি টিম কাজ করে যাচ্ছে লিকেজ নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প, মদুনাঘাট ও মোহরা প্রকল্প থেকেই দৈনিক পানি উৎপাদন হয় ৩২.৩ কোটি লিটার। বাকি ৩.৩ কোটি লিটার পানি আসে গভীর নলকূপ থেকে। এখানে সংযুক্ত আছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফ্লো মিটার। তাই রাজস্ব বিভাগের বক্তব্য সত্য নয় বলে দাবি প্রকৌশল বিভাগের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, ৯৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসায় ডিস্ট্রিক মিটারিং এরিয়া (ডিএমএ) প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে ২০২১ সালের মধ্যে। আশা করি, ডিএমএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এনআরডব্লিউ পরিমাণ অনেক কমে আসবে।
ফজলুল্লাহ আরো বলেন, এর বাইরেও পানির অপচয়রোধে আরো বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে বর্তমান সরকার। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী ২৪ ঘণ্টাই পানি পাবেন।