এক যুবককে আটকের ঘটনায় সীতাকুণ্ডে সোমবার (২০ মে) রাত ১২টায় পুলিশ ও জেলেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আতঙ্কে জেলেপাড়ায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টা গুলি। একপর্যায়ে জেলেরা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স আনা হয়।
ঘটনার পর জেলেদের ১২টি দোকান ও ৮টি বসতঘরে ভাংচুর চালানো হয় বলে জেলে সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া জেলে পল্লী থেকে ১২ জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে দাবি জেলে সর্দারদের। তবে পুলিশ ১১ জনকে আটকের কথা স্বীকার করেছে।
এ ঘটনায় এক ইন্সপেক্টর, তিন এসআইসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আর গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে জেলে সম্প্রদায়ের অর্ধশত নারী-পুরুষ। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল থেকে ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। জেলেদের দাবি, ঘটনার পর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা।
জানা যায়, সোমবার রাত ১২টায় বড় কুমিরা ঘাটঘর জেলেপাড়ায় রুবেল জলদাস নামক এক যুবককে ঘূম থেকে তুলে আটক করেন সীতাকুণ্ড থানার এসআই জাহেদ হোসেন জসীম। এসময় এলাকার এক বৃদ্ধা নারীসহ অন্যান্যরা তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেয়ে বাধা দিলে জসীম ও সঙ্গীয় ফোর্স তাদের মারধর করে বলে জেলেদের অভিযোগ। এসময় বিলাম্বু দাসী (৬৫) নামক এক মহিলার মৃত্যু হলে পুলিশের হামলায় ওই বৃদ্ধার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে জেলেরা এসআই জসীমসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে ঘিরে ফেলে ও পিটিয়ে জখম করে।
খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড থানা থেকে ফোর্স গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারা এ হামলা চালিয়েছে তা জানতে জেলেদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু উভয়পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে পুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষ শুরু হয়। জেলেরা বোতল, ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এসময় অন্তত শতাধিক রাউন্ড গুলি চলে বলে এলাকাবাসী জানায়। এতে ওসি (তদন্ত) আফজাল ও দুই পুলিশ সদস্য জখম হন। আহত হয় জেলে সম্প্রদায়ের অর্ধশত নারী-পুরুষ।
ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী ও ইউপি সদস্যসহ অন্যরা সেখানে পৌঁছান। কিন্তু রুবেলকে আটক ও বিলাম্বু দাসীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত জেলেরা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। রাত ২টার পর পুলিশ ও বহিরাগত কিছু লোক জেলে সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘরে হামলা চালায়। ভাংচুর করে তাদের বসতঘর ও দোকানপাট।
জেলে সুবল দাস জানান, পুলিশ নিরপরাধ রুবেল জলদাসকে ঘর থেকে নিয়ে যাচ্ছিল। অথচ তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। এর কারণ জানতে চাইলে এক বৃদ্ধা মহিলাকে পুলিশ মারধর করে। এতে তিনি মারা যান । ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
তবে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের দাবি, ওই মহিলা স্ট্রোকে মারা গেছেন।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলকে গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত সীতাকুণ্ড মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আফজাল হোসেন বলেন, ৩০ হাজার পিস ইয়াবা সন্দ্বীপে চালান হবে নিশ্চিত হয়েই সন্দেহভাজন রুবেল দাসকে আটক করে পুলিশের একটি টিম। এসময় জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। আর ওই বৃদ্ধার মৃত্যুর সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। আসামি গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল। জেলেরা এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলকে ছিনিয়ে নেওয়ায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় কুমিরা জেলেপাড়া এলাকা থেকে ১১জনকে আটক করা হয়েছে। তবে বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুইটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
জয়নিউজ/সেকান্দর/আরসি