ট্রেন যাত্রীদের টিকিটপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য সবধরণের জটিলতা কাটিয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশে বহুল আলোচিত ডিও লেটার কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ট্রেন ভ্রমনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ এখন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাবেন বলে আশা করছেন খোদ রেলমন্ত্রী।
এ বিষয়ে সোমবার (২৭ মে) জয়নিউজকে তিনি বলেন, অনেক চিন্তা-ভাবনা আর সাহস করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আমি চেয়েছিলাম সব কোটা উঠিয়ে দিতে। কিন্তু রেলকর্মী ও কর্মকর্তা ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বমোট ১০ ভাগ কোটা রেখে ডিও লেটার পদ্ধতি উঠানোর নির্দেশ দিয়েছি। এর ফলে রেলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এখন আর কেউ চাইলেই ডিও লেটার দিলেই টিকিট পাবেন না। কাউন্টারে টিকিট থাকা সাপেক্ষে একজন যাত্রী তার নির্ধারিত যাত্রার জন্য সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাউন্টার অথবা অনলাইনে কাটতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে কঠোর উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে সব স্টেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
এদিকে অ্যাপস সেবার কারণে দেশে রেলওয়েতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বলা যেতেই পারে। কারণ ট্রেনের টিকিট এখন অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া গেলেও কিছুটা জটিলতা আছে। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে রেলওয়ের সেবার মান বাড়াতে আগ্রাহী রেলপথ মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৭ মে) রেলভবনে মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন অধিকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে হয়রানির তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি এমন লোকের সংখ্যা কমই আছে। স্টেশনে গেলে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না এমন অভিযোগও অহরহ। আর অনলাইনে গেলেও ত্বরিৎ টিকিট পাওয়া যায় এমনটা বলা যাবেন না। টিকিট যেন সোনার হরিণ । কারণ কোটা প্রথা। কোটাপ্রথা বলতে ডিও লেটার। দেশের সবশ্রেণী পেশার বিশিষ্টব্যক্তিদের ডিও লেটারসহ মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সবারই টিকিট চাই। যার দরুণ রেলের শৃঙ্খলা অনেকটাই নষ্ট হতে চলেছে। কিন্তু ডিও লেটার পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় ট্রেনে গতি আসবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, যাত্রীদের চাপ নিরসনে প্রাথমিকভাবে রেলপথ মন্ত্রী সবকোটা বাতিল করার নির্দেশ দিলেও পরে মৌখিকভাবে শুধুমাত্র মন্ত্রী, সচিব, এমপি ও বিচারপতিগণ যদি নিজে ট্রেনে ভ্রমন করেন সেক্ষেত্রে তাদের জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা রেখে সকল ধরনের ডিও লেটার নিষিদ্ধ করে দেন।
মন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সকল ধরনের ডিও লেটার বাতিল করে ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ ও রেল কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে বাকী ৯০ শতাংশ অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে অনেকেই ট্রেনের টিকিট পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাটতে আসা এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তার নাম এমএ হাবিব। বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, আমরা টিকিট কাটতে বার বার হয়রানির শিকার হচ্ছি। কিন্তু এখন কোটা ও ডিও লেটার পদ্ধতি বাতিল করার ঘোষণা দেওয়ায় কিছুটা প্রশান্তি পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আগে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করে জানতে পারতাম টিকিট নাই। এখন অ্যাপসে জানতে পারছি আরও ২৩৩টি সিট আছে। এজন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর তিনি টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এসে এ প্রতিবেদকে দেখিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।