হালদায় মা-মাছের দেওয়া সংগৃহীত নিষিক্ত ডিমের পরিমাণ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। হালদা নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিতরা বলেন, এ বছর হালদা নদীতে মা-মাছের দেওয়া সংগৃহীত নিষিক্ত ডিমের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ। সংখ্যায় প্রকাশ করলে যা হবে প্রায় ৭ হাজার কেজি।
অথচ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সরকারি হিসাব মতে, হালদায় মা-মাছের দেওয়া সংগৃহীত নিষিক্ত ডিমের পরিমাণ ১০ হাজার কেজি ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে রেণু পরিস্ফুটনের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের কেউ আধুনিক পদ্ধতিতে সরকারি হ্যাচারিতে, আবার কেউ নিজেদের তৈরি সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কুয়ায় সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এ কাজে ডিম সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে আইডিএফ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তবে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালানোর কারণে মদুনাঘাট, শাহ মাদারী ও মাছুয়াঘোনার তিনটি সরকারি হ্যাচারিতে রেণু পরিস্ফুটনের কাজ পুরোদমে চলছে।
এছাড়া রাউজান উপজেলার তিনটি সরকারি হ্যাচারির মধ্যে মোবারক খিল হ্যাচারিটি রেণু পরিস্ফুটনের জন্য উপযোগী। পশ্চিম গহিরা হ্যাচারির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও কাগতিয়া হ্যাচারিটি পরিত্যক্ত।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন জয়নিউজকে বলেন, চলতি বছরে ৬টি সরকারি হ্যাচারির মধ্যে হাটহাজারীতে ৩টি এবং রাউজানে ২টি সচল আছে। এর মধ্যে রাউজানের পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিটির অবস্থা শোচনীয়। হাটহাজারীর ৩টি সরকারি হ্যাচারিতে ৪০৮ বালতি (প্রতি বালতি গড়ে ১০-১২ কেজি নিষিক্ত ডিম ধারণ করতে পারে) ডিম রয়েছে। এর মধ্যে মদুনাঘাট হ্যাচারিতে ১৪২ বালতি, শাহ মাদারী হ্যাচারিতে ১৩৬ বালতি ও মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে ১৩০ বালতি ডিম রয়েছে।
এছাড়া রাউজান উপজেলার মোবারক খিল হ্যাচারিতে ৫৪ বালতি ও পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিতে শুধু ৯ কেজি ডিম রাখা হয়েছে। এ হিসাবে ৫টি হ্যাচারিতে ডিম রয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ কেজি।
তিনি আরও বলেন, হাটহাজারী ও রাউজান এ দুই উপজেলায় সনাতন পদ্ধতিতে ১৩৯টি কুয়ায় রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৩২০ কেজি ডিম। এর মধ্যে হাটহাজারীর ৮০টি কুয়ায় ২ হাজার ৩১৫ কেজি এবং রাউজানের ৫৯টি কুয়ায় আছে ৪ হাজার ৫ কেজি। সরকারি হ্যাচারি ও মাটির কুয়া মিলে রয়েছে ১০ হাজার ৯৫২ কেজি ডিম। সবকিছু ঠিক থাকলে ৪-৫ দিনে এই ডিম থেকে ১৮২ কেজি রেণু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়া, দেরিতে ডিম দেওয়া, ইঞ্জিনচালিত নৌযান ও ড্রেজারের পাখার আঘাতজনিত কারণে মা-মাছের মৃত্যু তথা সংখ্যা হ্রাস, নদী দূষণসহ নানা কারণে এবার আশানুরূপ ডিম পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি জয়নিউজকে বলেন, এবার মাত্র ৭ হাজার কেজি ডিম পাওয়া গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তা থেকে চার দিন পর ১১৭ কেজি রেণু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তবে এ বছর আশানুরূপ ডিম পাওয়া না গেলেও ২০১৪ ও ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান চিন্তা করলে তা কিন্তু উৎসাহব্যঞ্জক। ওই দুই সালে তেমন একটা ডিম মেলেনি হালদায়।
এদিকে সংগৃহীত ডিম নিয়ে হালদা গবেষকদের সঙ্গে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের ধুম্রজালকে পুঁজি করে অপতৎপরতা চালাচ্ছে অসাধু রেনু পোনা উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছে প্রকৃত ডিম সংগ্রহকারীরা। তবে বিষয়টি নিয়ে কড়া নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের। যাতে অসাধু উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা হালদার রেণুর সঙ্গে স্থানীয় হ্যাচারির রেণু মিশিয়ে ভেজাল দিতে না পারে।
এছাড়া পিকেএসএফ এর আওতাধীন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) উদ্যোগে হাটহাজারী ও রাউজানে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে হালদায় পাহারা দেওয়া হচ্ছে। সহায়তা করা হচ্ছে মাটির কুয়া তৈরিসহ হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটনের কাজে।