ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় রয়েছে বড় মিল। তিন সংগঠনের নগর কমিটির মেয়াদ পেরিয়েছে অনেকদিন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে জয়নিউজের ধারাবাহিক আয়োজনে আজ দ্বিতীয় পর্ব নগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে। বিস্তারিত পড়ুন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রুবেল দাশের প্রতিবেদনে
২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি। নির্দেশনা ছিল তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। তবে ছয় বছর পার হলেও কমিটি করতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি। কবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে তাও বলতে পারছেন না আহ্বায়ক কমিটির নেতারা।
তবে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী জয়নিউজকে জানিয়েছেন, শিগগির নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে নগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন পার হয়ে যাওয়ায় এখন ওই কমিটিও অনেকটাই নামসর্বস্ব। কমিটির সদস্যসহ নগর যুবলীগের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে মহানগর যুবলীগের কর্মকাণ্ড এবং উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্বও।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। ১৯৮৯-৯০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ৬৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছিল, ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন নোমান আল-মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিকুল হাসান। এরপর ২০০৩ সালের জুলাই মাসে মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণা নিয়ে সংঘর্ষের জেরে তা পণ্ড হয়ে যায়। এর দেড় বছর পর চন্দন ধরকে আহ্বায়ক ও মশিউর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও ফরিদ মাহমুদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে আবারও ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। সেই আহ্ববায়ক কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি।
কথিত আছে, আহ্বায়ক কমিটির সদিচ্ছার অভাবেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না। কয়েকবার কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনের জন্য তাগাদা দেওয়া হলেও কোনো এক অজানা কারণে আহ্বায়ক কমিটি তা পাশ কাটিয়ে যায়।
এদিকে, ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণার পর স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেকের অভিযোগ, ওই কমিটিতে প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরাই বেশি ছিলেন। এতে বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে মাত্র সাতজন স্থান পেয়েছিলেন। এ নিয়ে তখন কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছুলেও বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। তবে বেশ কজন প্রভাবশালী নেতা বর্তমানে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে মহানগর যুবলীগের রাজনীতি করে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, কেন্দ্র থেকে কয়েকবার আমরা চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা আহ্বায়ক কমিটিকে জানিয়েছিলাম। বিভিন্ন কারণে কমিটি করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। সম্মেলনে সমঝোতা না হলে সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে কমিটি করা হবে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রস্তাবনার মাধ্যমে সাবেক ছাত্রনেতারাও যুবলীগের কমিটিতে আসতে পারবেন।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন জয়নিউজকে বলেন, নিশ্চয়ই কোনো জটিলতা আছে, সেজন্য হয়ত কমিটি হচ্ছে না। তবে কর্মীদের চেয়ে কেন্দ্রের দায়বদ্ধতা এখানে বেশি। কারণ তাদেরও বুঝতে হবে প্রত্যেকটি কমিটিরই একটি স্বাভাবিক মেয়াদ আছে। সেটি যখন পার হয়ে যায় তখন অন্যান্য নেতাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। যারা ছাত্র রাজনীতি করে এসেছে তারা নিশ্চয়ই যুবলীগের কমিটিতে যেতে চায়। কিন্তু নতুনদের যদি সুযোগ দেওয়া না হয় তাহলে সংগঠনে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিতে পারে।
মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে নগর যুবলীগ বসে নেই। মেয়র ও জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে সার্বক্ষণিক মাঠে ছিল নগর যুবলীগ। পাশাপাশি জাতীয় ইস্যুভিত্তিক সব আন্দোলনে যুবলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল। তাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে দেরি হয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা এলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
ঈদের পরেই নগর যুবলীগের কমিটি গঠিত হতে পারে বলে জানান তিনি।
তবে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে অবস্থান করার কারণে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।