চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধের অভিযোগ অনেকদিনের। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, লাইনে আসে ময়লা পানি। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫৬ বছরের পুরনো পাইপলাইনের কারণে এমনটা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন ৬৫০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পটি শেষ হলে এ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ওয়াসা দিতে পারবে আন্তর্জাতিকমানের সেবা।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, নগরে পানির সরবরাহ বাড়াতে কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (ফেজ-২) হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের অবস্থান রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়বে পুরো নগরজুড়ে।
জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ১১৯৭.৭৬ কোটি টাকা অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২১ সালে। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্তত এক বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
ওয়াসার প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ডিআইওএইচডিপিই পাইপ। পাইপগুলোর সক্ষমতা থাকবে ১০০-১২০ বছর। এছাড়া ডিস্ট্রিবিউশন ও সাপ্লাই লাইনে ব্যবহার হচ্ছে ৭৫ এমএম থেকে শুরু করে ১০০০ এমএম পাইপ।
নগরের পুরাতন ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন হবে ৭নং পশ্চিম হালিশহর, ৮নং শুলকবহর, ১২নং সরাইপাড়া, ১৪নং লালখান বাজার, ১৫নং বাগমনিরাম, ১৬নং চকবাজার, ১৭নং বাকলিয়া, ২০নং দেওয়ানহাট, ২১নং জামালখান, ২২নং এনায়েত বাজার, ২৩নং উওর পাহাড়তলী, ২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫নং রামপুরা, ২৬নং উত্তর হালিশহর, ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮নং পাহাড়তলী, ২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ী, ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ী, ৩১নং আলকরণ, ৩৩নং ফিরিঙ্গী বাজার, ৩৪নং পাথরঘাটা এবং ৩৫নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডে।
প্রকল্পের ডিপিডি ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জয়নিউজকে বলেন, পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিস্ট্রিক মিটারিং এরিয়াতে (ডিএমএ) চলে আসবে। নগরে ৫৯টি ডিএমএ থাকবে এবং ১০ সেক্টরে এটি বিভক্ত থাকবে। পুরো পানি সরবরাহ ব্যবস্থা তখন এই পাইপলাইনের মাধ্যমে হবে।
তিনি আরো বলেন, এরপর আমরা গ্রাহককে কী পরিমাণ পানি সরবরাহ করছি এবং গ্রাহক কত পানি পেলেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব পাওয়া যাবে। আগামীতে নন র্যাভেনিউ ওয়াটার (এনআরডব্লিউ) কমে যাবে আশা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এনআরডব্লিউ ৫ শতাংশে নেমে আসবে। এতে করে বাড়বে ওয়াসার রাজস্বের পরিমাণ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, পাইপলাইন প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে গ্রাহকরা সরাসরি পানির কল থেকেই পানি খেতে পারবেন। জরাজীর্ণ লিকেজযুক্ত পাইপের কারণে বর্তমানে ৬০-৬৫ পিএস (প্রেসার পার ইঞ্চি) প্রেসারে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে ১০০ পিএস প্রেসারে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ওয়াসার এমডি আরো বলেন, আমরা গুণগত মান ধরে রেখেছি বলেই বাংলাদেশে একমাত্র চট্টগ্রাম ওয়াসাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাটিফিকেট আইএসও ২০০৯ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও আমাদের এই মান অব্যাহত থাকবে। আর একটি কথা না বললেই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরেই চট্টগ্রামবাসীর জন্য আমাদের (ওয়াসাকে) বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিচ্ছেন। পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বের পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের সমমানের হবে।
জানা যায়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের অন্যান্য এলাকা ছাড়াও হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকার গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। উঁচু-নিচু এলাকাতেও অনায়াসে পানি পাওয়া যাবে।