দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বুধ (৫ জুন) কিংবা বৃহস্পতিবার (৬ জুন) হতে পারে ঈদুল ফিতর। এ অবস্থায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে নগর ছাড়ছে মানুষ।
চাকরির খাতিরের বিভিন্ন জেলার মানুষ রয়েছেন নগরে। তাদের প্রায় সবাই ইতোমধ্যে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার নগরে বসবাস করা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মানুষও ঈদ করতে ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে। তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে পরিবারের সব সদস্যকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা চান রাতের ব্যবসা শেষে ছুটবেন গ্রামে।
এদিকে সবাই ঘরমুখো হওয়ায় ফাঁকা হতে শুরু করেছে নগর। আগামীকালের (৪ জুন) মধ্যে নগর একেবারে ফাঁকা হয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
পাল্টে গেছে চিরচেনা নগরের ব্যস্ততম সড়কের অসহনীয় যানজটের দৃশ্য। মানুষের সব স্রোত এখন মিশেছে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে।
সোমবার (৩ জুন) সরকারি অফিস খোলা থাকলেও অনেকে টানা নয় দিনের ছুটি কাটাতে আজ সোমবারের অগ্রিম ছুটি নিয়ে ইতোমধ্যেই শহর ছেড়েছেন। সোমবার সকাল থেকে নগরের বহদ্দারহাট, ফ্রি-পোর্ট, আগ্রাবাদ, চকবাজার, নিউমার্কেট, এ কে খানসহ বিভিন্ন রুটের অনেক বাস ও টেম্পো অল্প কয়েকজন যাত্রী দিয়ে যাতায়াত করছেন। যাত্রী কম ছিল অটোরিকশায়ও। ইফতারের আগে-পরে শপিংমলগুলো ছাড়া অন্য কোথাও তেমন কোনো যানজট দেখা যায়নি।
বহদ্দারহাট-ফ্রি পোর্ট রুটের বাসচালক ফরহাদ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই রুটে গাড়ি নিয়ে তিনবার যাওয়া-আসা করি। খরচ বাদ দিয়ে আমার হাতে ৯শ’ টাকার মতো থাকে। আজও তিনবার যাওয়া-আসা করেছি। কিন্তু সব খরচ বাদ দিয়ে আমার হাতে আছে সাড়ে তিনশ’ টাকা। কারণ যাত্রী কম। মঙ্গলবারও (৪ জুন) এভাবেই চলবে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জয়নিউজকে জানান, প্রতিবারের মতো এবারো ঈদে বাড়তি যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ট্রেন ও বগির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক যাত্রীই ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছেন। গত শনিবার ও রোববার মিলিয়ে আনুমানিক দশ হাজার মানুষ রেলপথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করেছেন।
এদিকে গত দু’দিন দিন-রাত সমানে নগর ছেড়েছে দূরপাল্লার বাস। সোমবার বিকালে বিআরটিসি, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন ও অলংকার বাসস্টেশনে দেখা গেছে ঈদে বাড়ি ফিরতে উদগ্রীব যাত্রীদের ভিড়।
বিআরটিসি শ্যামলী বাস কাউন্টারের কর্মকর্তারা মো. সিদ্দিক জানান, শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটি এবং রোববার শবে কদরের ছুটি ছিল। অনেকে সোমবারও ছুটি নিয়ে শুক্রবারেই শহর ছেড়েছেন। এজন্য উত্তরবঙ্গ, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত তিনটি বাস নিয়মিত চট্টগ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে।
তবে ঈদে বাড়ি ফিরতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের। সোমবার নগরীর ট্রেন, লঞ্চ ও বাস স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীর ভিড়। বাস ও রেল স্টেশনে টিকিট সংকটে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় স্টেশনের কর্মকর্তাদের। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট না পেয়ে অনেকেই ‘স্ট্যান্ডিং’ টিকিট কাটেন। আর তাদের অনেককে ট্রেনের ছাদে উঠে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় ট্রাকে করেও অনেককে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ছিল নৌপথেও। শেষ মুহূর্তে বাড়িফেরা মানুষের চাপ থাকায় বাড়তি যাত্রী নিয়েই ছেড়েছে প্রতিটি জাহাজ।