একটা সময় ছিল ঈদে সপরিবারে সিনেমা দেখতে মানুষ সিনেমা হলে যেত। স্বাধীনতার আগে ও পরে এই সংস্কৃতি চালু ছিল সমাজে। সেদিন এখন নেই। আকাশ প্রযুক্তি মুক্ত হওয়ায় মানুষ এখন ঘরে বসেই আরাম-আয়েশে সিনেমা দেখেন। সিনেমা চলে না বলে সিনেমা হলের অবস্থা ভালো নয়। অনেক সিনেমাহল এখন বিলীন।
চট্টগ্রাম নগরে এখন সিনেমাহল রয়েছে হাতেগোণা মাত্র ক‘টি। এগুলো হলো সিনেমা প্যালেস, আলমাস, দিনার এবং সিলভার স্ক্রিন।
এবারের ঈদে আলমাস সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ এবং সিনেমা প্যালেসে চলছে শাকিব খান -ববি অভিনীত ‘নোলক’।
শনিবার (৮ জুন) সিনেমা হলগুলোতে গিয়ে দেখা গেল, দর্শক নেই বললেই চলে।
সিনেমা প্যালেসে সপরিবারে সিনেমা দেখতে আসা মঞ্জুর আলম জয়নিউজকে জানালেন, আসলে হলে বসে সিনেমা দেখা হয় না। এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। তাই পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসা। আসলে শাকিবের ছবি তেমন দেখা হয় না।
তবে হলের পরিবেশ খুব একটা সুবিধাজনক নয় বলে তার মন্তব্য।
সিনেমা প্যালেসের গেট কিপার আবুল কালাম। বয়সটা ৭৫ এর কাছাকাছি। তার কাছে জানতে চাইলাম সিনেমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। তিনি জয়নিউজকে বললেন, এখন সিনেমা দেখতে তেমন কেউ আসে না। মানুষ এখন ঘরে বসে খুব সহজে সিনেমা দেখে। যখন আমরা ছোট ছিলাম, হলে সিনেমা দেখার একটা ঝোঁক ছিল। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের ভারতীয় হিন্দি সিনেমার প্রতি ঝোঁক বেশি।
তিনি আরো বলেন, এখানে ৪টি শো করা হয়েছে। দুপুর ১২.৩০ থেকে বিকাল ৩টা, বিকাল ৩.৩০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, সন্ধ্যা ৬.৩০টা থেকে রাত ৯টা, রাত ৯.৩০টা থেকে রাত ১১টা। এখন ঈদ উপলক্ষে চলছে শাকিব খানের ‘নোলক‘। আমাদের হলে আসনসংখ্যা ২০০টি। কিন্তু বেশিরভাগ সিটই খালি। কারণ দর্শক নেই।
আলমাস সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল জয়নিউজকে বলেন, বাংলা সিনেমার যে এমন হাল হবে কখনো ভাবতে পারিনি। সিনেমা হলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৪৭ বছরের। আগে দর্শকদের সিনেমার প্রতি যে আকর্ষণটা ছিল, তা এখন উঠে গেছে বললেই চলে।
ঈদেও প্রত্যাশিত দর্শক সমাগম হচ্ছে না। আসলে এখন ভারতীয় সিনেমাই দর্শক বেশি দেখতে চায়।
আলমাস সিনেমা হলে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসা তরুণ রাব্বি হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আসলে খুব একটা দেখা হয় না বাংলা সিনেমা। বন্ধুরা বললো, তাই আসা। শাকিবের ‘পার্সওয়ার্ড‘ দেখলাম। ভালোই লাগলো।
তিনি আরো বলেন, সিনেমা হলগুলোরও অবস্থা ভালো না। স্ক্রিন এবং চেয়ারগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। আর ভেতরে প্রচণ্ড গরম। দর্শকের তুলনায় ফ্যান যথেষ্ট নয়। তার উপর মশায় কামড়ায়। কে আসবে সিনেমা দেখতে হলগুলোতে! হল কর্তৃপক্ষ চাইলে এসব ঠিক করতে পারে।
আলমাসের সঙ্গেই লাগোয়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি সিনেমা হল দিনার। সেখানে ঈদে পুরানো সিনেমা অমিত হাসানের ‘নয়া মাস্তান’ চলছে। এখানে দর্শক সমাগম আলমাসের চেয়েও কম।
দর্শকশূন্যতার কারণে দেশজুড়ে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় এগুলোর উন্নয়ন হচ্ছে না। হলগুলোকে ডিজিটাল করা উচিত, সিনেমার এই দুর্দিনে সিনেমা হলে আসা দর্শকদের একটাই চাওয়া।
জয়নিউজ/আরসি