শতাধিক রোগী সকাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে অপেক্ষা করছিল সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে।
সকাল আটটায় বহির্বিভাগে সেবা চালু হওয়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর সাড়ে নয়টায়ও চিকিৎসকশূন্য ছিল এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ।
রোববার (৯ জুন) সকালে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে ঝটিকা সফরে গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
স্থানীয় রোগীরা জানান, শুধু রোববার নয় হাসপাতালের এ চিত্র প্রতিদিনের।
ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জয়নিউজকে বলেন, হাসপাতালে গিয়ে দেখি বহির্বিভাগে রোগী বসে আছেন, কিন্তু চিকিৎসক নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, চিকিৎসকরা মিটিং করছেন। এরপর চিকিৎসকদের বললাম আপনারা সবাই মিটিং করছেন কেন? কয়েকজন তো সেবা দিতে পারতেন। মিটিং করছেন সেটা রোগীরা বুঝবে নাকি?
আমি আসার পর রোগীরা অভিযোগ দিলো, সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসক নেই’ বলেন সিভিল সার্জন।
এসময় তিনি মিটিং করতে হলে রোগীদের সেবা শেষে মিটিং করার পরামর্শ দেন কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকদের।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি এ এলাকার চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ যোগ দেওয়ার পর থেকে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে।
বিশেষত বহির্বিভাগ সকাল ৮টা থেকে খোলা হলেও সাড়ে ৯টা-১০টার আগে কোনো ডাক্তারই সেখানে চিকিৎসা দিতে উপস্থিত থাকেন না।
এসময় অসংখ্য রোগী টিকিট কেটে অপেক্ষায় থাকলেও বেশিরভাগ ডাক্তারই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার তোষামোদী করতে ব্যস্ত থাকেন। এরপর নিজেদের খেয়াল খুশিমত এক-দেড় ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে হাসপাতাল ছেড়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে যোগ দেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ থাকলেও রোববার ঝটিকা পরিদর্শনে এসে নিজের চোখেই সেই চিত্র প্রত্যক্ষ করলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী জয়নিউজকে বলেন, আমি ৯টা ৩৫ মিনিটে হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখি কোনো ডাক্তার নেই! রোগীরা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের অনেকেই আমাকে দেখে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।
পরে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখি ডাক্তাররা সেখানে মিটিং করছেন। বহির্বিভাগে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে ডাক্তাররা মিটিংয়ের কথা বলেন। কিন্তু তারা মিটিং আগে বা পরেও করতে পারতেন। ডাক্তারদের কাছে আগে রোগী। প্রথমে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পরে অন্য সব কাজ। তবে জরুরি বিভাগসহ ও হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে ভালো সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে- যোগ করেন সিভিল সার্জন।
তিনি বলেন, আমি ভবিষ্যতেও আবার যেকোনো সময় পরিদর্শনে আসব। সেদিন কোনো অনিয়ম পেলে ছাড় দেওয়া হবে না।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি ৫০ শয্যার। তবে সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। জোড়াতালিতে চলছে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বিভিন্ন বিভাগে ১৫ জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার আমিরাবাদের বাসিন্দা সুলতানা ইয়াছমিন বলেন, বহির্বিভাগে প্রায়সময় চিকিৎসক থাকে না। ‘সেবা নিতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। মাঝেমধ্যে চিকিৎসক পাওয়া গেলেও, শুধু ওষুধ লিখে দেন। হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরকারি ওষুধ দেওয়া হয় না, নিজেদের কিনতে হয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী বলেন, চিকিৎসকরা একটি মিটিংয়ে ছিলেন। এজন্য বহির্বিভাগে তখন চিকিৎসক ছিল না।
বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা উপস্থিত হন বলে তিনি উল্লেখ করলেও নিয়ম অনুযায়ী বিকল্প চিকিৎসক দিয়ে সার্বক্ষণিক সেবা চালুর রাখার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, রোগীদের বসার ব্যবস্থা ছিল। মিটিং শেষে চিকিৎসকরা সেবা দেওয়া শুরু করেছেন।