কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগময় গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’- মনে করিয়ে দেয় আবারও সবুজের সমারোহে হাজির হয়েছে বর্ষাকাল। শনিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথম দিন।
বর্ষার এ সময়ে পুষ্প-পত্র-পল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় প্রকৃতিতে। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ গ্রাম কিংবা নগরবাসী সবাইকে মুগ্ধ করে।
ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ়কে বলা হয় ঋতুর রাণী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে/নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’। মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বর্ষার রূপ-ঐশ্বর্যে মোহিত অনেক কবিই বাংলা সাহিত্যকে করেছেন ঋদ্ধ।
বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বতন্ত্র। বর্ষা কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ।
আষাঢ়েই শোনা যায় রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ। নবধারা জলে ভিজে শীতল হওয়ার আহ্বান এখন প্রকৃতিতে। সব রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে নরম কোমল হয়ে উঠবে বাংলার মাটি। নতুন প্রাণের আনন্দে অঙ্কুরিত হবে গাছপালা, ফসলের মাঠ।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচেপড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ওঠে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনে কেতকির মাতামাতি।
তবে বর্ষা যেমন আনন্দের, বর্ষার নির্মম নৃত্য তেমনি হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্যশস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমে অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে।
জয়নিউজ/আরসি