আতপ চালের চাহিদা বেশি চট্টগ্রামে। অপরদিকে চট্টগ্রামে সিদ্ধ চাল উৎপাদন না হলেও, এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪ হাজার মে. টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করছে সরকার। এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভ হচ্ছে মিল মালিকদের। এই লাভের ভাগ পাচ্ছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও।
মিল মালিকরা জয়নিউজকে জানান, চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা সিদ্ধ চাল নওগাঁ, জামালপুর, দিনাজপুর, নেত্রকোনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে আতপ চাল আনা হয়। এই আনা-নেওয়ার পরিবহন খরচ গুনতে হয় সরকারকে। এক ট্রাকে ১৩ টন চাল পরিবহন করা যায়। সেই হিসাবে প্রায় ৪ হাজার টন চাল পরিবহনে কমপক্ষে ৩০৭ ট্রিপ লাগে। চট্টগ্রাম থেকে উত্তরবঙ্গের ট্রাক ভাড়া ৩০-৩২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রায় কোটি টাকার পরিবহন খরচ গুনতে হবে সরকারকে।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্ত দাশগুপ্ত জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে সিদ্ধ চালের চাহিদা না থাকায় শুধু একটি অটো রাইস মিল রয়েছে। অন্যগুলো হচ্ছে চাতাল বা মাঠ ব্রয়লার। ধান সিদ্ধ করার পর মাঠে শুকিয়ে মিলিং করা হয় এসব মেশিনে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল সরবরাহ করা যায় না।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৬৩৮ মে. টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরমধ্যে আতপ চাল ১০ হাজার ৭১১ মে. টন। আতপ চাল ৩৫ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা দরে মিল মালিকদের কাছ থেকে কিনছে সরকার। অথচ চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা দরে। আর সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৬-৭ টাকা লাভ করছেন মিল মালিকরা।
তবে মিল মালিকদের দাবি, লাভের অর্ধেক ভাগ দিতে হয় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও গুদাম রক্ষকদের। সরকার প্রতিবছরের মত এবারও ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেছে। যা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এবার চট্টগ্রামে ১৪ হাজার ৬৩৮ মে. টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এরমধ্যে আতপ চাল ১০ হাজার ৭১১ মে. টন এবং সিদ্ধ চাল ৩ হাজার ৯২৭ মে. টন।
প্রত্যেক উপজেলা থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করা হলেও সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে তিন উপজেলা থেকে। মিরসরাই উপজেলা থেকে ৯১৪ টন, সীতাকুণ্ড থেকে ৪১৬ টন ও ফটিকছড়ি থেকে ১ হাজার ৪৯৭ টন। এরমধ্যে ফটিকছড়িতে জাবেদ অটো রাইস মিলের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি দেখিয়ে প্রায় ১৮শ’ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য বিভাগ অনিয়মের মাধ্যমে এই বেশি বরাদ্দ দিয়েছে বলে অভিযোগ।
তারা আরো জানান, উৎপাদন কম থাকায় অন্য জেলা থেকে সিদ্ধ চাল কিনে এনে সরকারের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অভিনব কারচুপির জন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদেরও দিতে হচ্ছে ভাগ। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভ মিল মালিক ও খাদ্য বিভাগ ভাগাভাগি করে খাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, পরিকল্পনার অভাবে ক্ষতি গুনতে হচ্ছে সরকারকে। চট্টগ্রামে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ কমিয়ে আতপ চালের সংগ্রহ বাড়িয়ে দিলে একদিকে কৃষক লাভবান হবে, অপরদিকে সরকারের আর্থিক ক্ষতি কমবে।
অন্যদিকে ফড়িয়া ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। কৃষকের ঘামে ফলানো ধান নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকের কাছ থেকে মণপ্রতি ৫৫০ থেকে ৬শ’ টাকা দরে ধান কিনছে। আর সেই ধান বা চাল সরকারি দরে বিক্রি করছে।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি জানান, মিল মালিকরা লাভবান হলেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। এজন্য জেলা প্রশাসন ও সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কারণ কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না।
জয়নিউজ/আরসি