চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার দুই কানুনগোর হাতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩১টি মামলা। একজন বদলি হওয়ার পর তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। এলএ শাখার কানুনগোদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গতমাসে একজনের বদলির ঘটনায় এ অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ১৮ কানুনগোর পদের মধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র দুইজন। অনিয়মের অভিযোগে একজনকে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে। আরেকজন প্রেষণে অন্য জায়গায় কাজ করছেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে বে-টার্মিনাল প্রকল্প, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প পুলিশের পুলিশ লাইন, হাইওয়ে পুলিশফাঁড়ি, পিবিআই’র কার্যালয় নির্মাণ, নেভাল একাডেমি সম্প্রসারণ প্রকল্প, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন লাইন, টানেল নির্মাণ, বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ওয়াসার ভাণ্ডারজুড়ি প্রকল্প, রেলওয়ের মেগা প্রকল্প, দোহাজারী থেকে ঘুমঘুম রেললাইন প্রকল্প। এছাড়া মডেল মসজিদ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সংযোগ সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রেলের দোহাজারী-ঘুমঘুম ও বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। রেলের ঘুমঘুম প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনিয়ম তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মে মাসে এলএ শাখার প্রকল্পভিত্তিক কর্মবণ্টন তালিকায় দেখা যায়, দুই কানুনগোর নামে ১৩১টি প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে কানুনগো চিং সানু মারমার হাতে রয়েছে ৫৭টি ও জয়প্রকাশ চাকমার হাতে রয়েছে ৭৪টি প্রকল্প।
কানুনগো জয়প্রকাশ চাকমা জয়নিউজকে বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে বদলি হয়ে যাব। ফাইল অর্ডার হয়ে গেছে। চিং সানু মারমা ২০১৪ সালের ৮ মে এই শাখায় যোগদান করেন। ওই সময় দেশের বহুল আলোচিত ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল আদালত প্রাঙ্গণে। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই শাখায় আছেন তিনি। অন্যদিকে জয়প্রকাশ চাকমা ২০১৭ সালের মার্চ মাসে যোগদান করেন এখানে।
গত ১৩ মে এলএ শাখা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কানুনগোকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা ভূমি অফিসে বদলি করা হয়। বদলির পর ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন জাহাঙ্গীর আলম।
অভিযোগে তিনি দাবি করেন, দোহাজারী-ঘুমঘুম পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রায় ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতিপুরণের একটি মামলা নিয়ে এডিসির সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়।
ওই অভিযোগের তদন্ত কমিটির কাছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, কানুনগো জাহাঙ্গীর আলমের অসহযোগিতার কারণে এলএ মামলা নং-৩৬২০১৬-১৭ এর ক্ষতিপুরণ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। অথচ এ ক্ষতিপুরণের টাকা প্রদানে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া কানুনগো জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এলএ শাখায় আসা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে হয়রানিসহ দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে সদ্য বদলিকৃত কানুনগো জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২৯ বছর ৮ মাস সুনামের সঙ্গে চাকরি করে আসছি। দেরিতে অফিসে আসলে, কাজে অবহেলা করলে বড় বড় প্রকল্পগুলো কিভাবে করলাম।
দুর্নীতি আর ঘুষের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি টাকা তছরুপ চেষ্টায় সায় না দেওয়ায় আমার নামে মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছে।
তবে এ বিভাগের কানুনগোদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দ্বীপকলা মোড়ল মৌজায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। ওই অধিগ্রহণের সময় একজনের স্থলে অন্যজনকে মালিক সাজিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কানুনগো মুহাম্মদ শামসুল হকের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এছাড়া ভুয়া মালিক সাজিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সার্ভেয়ার এমএম নাদিমের বিরুদ্ধেও মামলা করে দুদক।
কিন্তু বর্তমানে মাত্র দুইজন কানুনগোর কাঁধে ১৩১টি ভূমি অধিগ্রহণ মামলার দায়িত্ব থাকায় একদিকে সরকারি প্রকল্পের ভুমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা পড়ছেন বিপাকে।
জয়নিউজ/আরসি