প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে সব প্রস্তুতি নিয়ে আগামী ১ জুলাই থেকে সারাদেশে নতুনরূপে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য নিজেদের জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি সর্বশক্তি দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ছক কষা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের একটি তালিকাও করা হয়েছে। তালিকায় সরকারি দলের বেশ কয়েকজনসহ বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী নেতা, এমপি, সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর নাম রয়েছে। তবে অভিযানের আগে নাম প্রকাশ করতে চায় না সংস্থাটি।
জানা গেছে, ভিআইপিদের দুর্নীতির অভিযোগগুলো সতর্কতার সঙ্গে দেখছে তদন্তদল। যেহেতু অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে, তাই এখনই তাদের গ্রেপ্তার না করে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানের নামও রয়েছে। তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য দেশের সব স্থল, নৌ, রেল ও বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, ডিআইজি মিজানকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি আছে দুদকের। যেহেতু ডিআইজি মিজান পুলিশের উচ্চপদের কর্মকর্তা, সেহেতু সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষা করছে দুদক। তবে আরেকটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। ঘুষের মামলায় ডিআইজি মিজান, এনামুল বাছির এবং সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারকে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ১ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
এদিকে অবৈধ সম্পদের মালিকদের বিরুদ্ধে ক্লিন একটা অভিযান চালাতে সরকারি সবুজ সংকেত মিলেছে। তবে দুদক আরো কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অভিযান পরিচালনায় মাঠে নামার উদ্যোগ নিযেছে। এর অংশ হিসেবে দুদক আরো এক ডজন নামকরা আইনবিদকে তাদের সহযোগী হিসেবে যুক্ত করছে। এর ফলে দুদকে মামলাজট কমবে ও আইনি সমাধান পাওয়া যাবে দ্রুত- এমনই ধারণা খোদ দুদক চেয়ারম্যানের।
সাঁড়াশি অভিযানের বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় বলে জেলা কর্মকর্তাদের এখনও এ বিষয়ে জানানো হয়নি। শুধু তাই নয়, অভিযানের আগে তা জানানো হবে না। সব প্রস্তুতি শেষে ঢাকা থেকে নির্ধারিত জেলা ও থানায় অভিযানের কিছু আগে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় দুদক কর্মকর্তাদের তা জানানো হবে। দুদককে কার্যকর করতেই এটা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আইনের কিছু ধারা সংশোধন করায় দুদক নিজস্ব লোকবল নিয়ে নিজেরাই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিতর্কিত ডিআইজি মিজান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা করেছে দুদক। শুধু তাই নয়, দুদক এর আওতাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজও নিতে শুরু করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে দুদককে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনমন্ত্রীর পরামর্শে দুদক আইন সংশোধন করে কার্যত দুদকের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এ আইন সংশোধনের কারণে দুদক নিজেই মামলা করতে পারবে এবং এর তদন্ত করতে পারবে। আসামি গ্রেপ্তারে দুদক তার নিজস্ব জনবল দিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। এর ফলে দুদকের গতি বাড়বে।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জয়নিউজকে বলেন, সর্বত্র সুনাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায়ের দিন শেষ। কেউ ঘুষ দিলে তিনিও অপরাধী। কারণ যিনি ঘুষ দিয়েছেন নিশ্চয়ই তার কিছু দুর্বলতা আছে। সুতরাং আমরা কাউকেই ছাড়ব না। যে অপরাধী তাকেই ধরব।
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা দুদকের আইনে আগেও মামলা করতে পারতাম। তবে আইনের কিছু বিষয়ে অনেকের মধ্যে অস্পষ্টতা ছিল। এখন আমরা আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করেছি, যাতে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করা যায়।
জয়নিউজ/আরসি