আগুন থেকে বাঁচাবে ‘রোবট ফোর্স’

দেশে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডে যেভাবে জানমালের ক্ষতি হয়, তা অপূরণীয়। অনেক সময় একটি পরিবার, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ড থেকে মানুষকে বাঁচাতে, অগ্নিনির্বাপণে এবং অগ্নিদুর্গত স্থানে দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে ’বাংলাদেশ রোবট ফোর্স ’। এই রোবট ফোর্স উদ্ভাবন করে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের অষ্টম পর্বের ছাত্র জাহেদ হোসাইন নোবেল।

- Advertisement -

গত ১৬ জুন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কিল কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। এই প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে মোট ৫৪টি প্রজেক্ট স্থান পায়। এতে প্রকৌশলী জাহেদ হোসাইন নোবেল উদ্ভাবিত প্রজেক্টটি ৩য় স্থান লাভ করে।

- Advertisement -google news follower

নোবেল চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রজেক্টে তার সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের ছাত্র ফাহিম জাওয়াদ ও ইমতিয়াজ বিন সোয়াইব। বাংলাদেশ রোবট ফোর্সের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে নোবেল বলেন, দেশে অগ্নিকাণ্ডে উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং সাধারণ মানুষ মারা যায়। আমি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ রোবটের কথা চিন্তা করি। এতে ফায়ারম্যানরা নিরাপদ থাকবেন। এ রোবট নিজে সিঁড়ি বেয়ে আগুন নেভানোসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করবে। এছাড়া ড্রোন ব্যবহার করে এ রোবটকে সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে।

এই রোবটটিকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে এক কিলোমিটার দূরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন একজন ফায়ারম্যান। অগ্নিকাণ্ডে যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তা ফিল্টারের মাধ্যমে অপসারণ করতে সক্ষম রোবটটি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের স্থানে রোবটটি প্রয়োজনীয় খাবার, মেডিসিন ও মাস্ক নিয়ে যেতে পারবে । রোবটটির বহনক্ষমতা ১৮ কেজি ।

- Advertisement -islamibank

তিনি জানান, এটি বাংলাদেশের বাজারে আনতে মাত্র ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা সম্ভব।

জাহেদ হোসাইন নোবেল ২০১৫ সালে লোহাগাড়া উপজেলা সদরের দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। ২০১৫-১৬ সেশনে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ভর্তি হন। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মালপুকুরিয়া গ্রামের চুন্নু মিয়ার বাড়ির মৃত জাকের হোসাইনের দ্বিতীয় পুত্র।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নোবেল বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার একটা ইচ্ছা ছিল নতুন কিছু উদ্ভাবন করার, দেশের জন্য কিছু করার। আর সে লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষাকে বেছে নিই।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর আনসার উল্লাহ আকাশ বলেন, নোবেলের রোবটটি অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এটি একসাথে তিন-চারটি কাজ করে। ড্রোন ব্যবহার করে রোবটটিকে সুউচ্চ দালনের অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে আগামী এক বছরের মধ্যে এটি বাজারজাতকরণ সম্ভব।

চট্টগ্রাম জেলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা রেজাউল কবীর বলেন, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দরকার। এ রোবট ফোর্স আগুন নির্বাপণে যে চেষ্টা করছে, তা অসাধারণ। এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে দেশে অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ক্ষতি অনেক কমে যাবে।

জয়নিউজ/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM