নগরের লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লালখান বাজার মোড় থেকে বাঘঘোনা মোড় এলাকা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ এসে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলালের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। গতকাল (শুক্রবার) গভীর রাতে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বেলাল গ্রুপের যুবলীগ কর্মী সাইদুল ইসলামসহ তিনজনের ওপর আকস্মিক হামলার পরে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সাইদুল। এর প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে লালখান বাজার মোড়ে কর্ণার হোটেলের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বেলালের অনুসারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মানববন্ধনে মিছিল নিয়ে আসার সময় বেলালের সমর্থকদের ওপর ইটের টুকরো নিক্ষেপ করা হয়। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। তখন মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক দুই গ্রুপ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। পুলিশ লাঠিচার্জের একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে দুইপক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট পর তারা আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু করলে পুলিশ মাসুমের অনুসারীদের লাঠিচার্জ করে বাঘঘোনার দিকে নিয়ে যায়।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, শুক্রবার রাতে বেলাল গ্রুপের একজনকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় শনিবার বিকেলে বেলাল ও মাসুম গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় এক পক্ষ অন্যপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করেছে। উভয়পক্ষের শতাধিক তরুণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। আমরা গুলি না ছুঁড়লে এখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত মো. বেলাল জয়নিউজকে বলেন, শুক্রবার আমার এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে মাসুম গ্রুপের কর্মীরা। তার প্রতিবাদে আমরা আজ (শনিবার) মানববন্ধনের আয়োজন করি। মিছিল করার সময় মাসুমের অনুসারীরা ইট-পাটকেল ও গুলি ছোঁড়া শুরু করে। এতে আমাদের চার কর্মী আহত হয়েছে।
লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম জয়নিউজকে বলেন, তারা মিছিল নিয়ে আমার অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অফিসের দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া শুরু করে। এসময় তারা অফিসের সামনে থাকা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এমন-কি অফিসের নিচে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবিও ভাঙচুর করে। তারা দাবি করে, আওয়ামী লীগের সমর্থক তারা। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করে কিভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়া যায় সেটা আমার বোধগম্য নয়।
এদিকে সংঘর্ষে আহত চার জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক হামিদুর রহমান।
তিনি বলেন, বিকেল ৫টার দিকে লালখান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে আহত রাসেল (১৫), সুমন (১৫), ইমন (১৭) ও মনির হোসেনকে (৪০) ভর্তি করা হয়েছে। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সংঘর্ষের পর পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বেলালের অনুসারীরা লালখান বাজার মোড়ে এবং মাসুমের অনুসারীরা বাঘঘোনার দিকে অবস্থান নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাদের মাঝে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।