বাঁশখালীর গন্ডামারায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় এক প্রবাসীর ছেলের অপকর্ম ধরা পড়ায় জিনের কারণে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। দরিদ্র পরিবারের এই ছাত্রীর বাবা-মা স্থানীয়ভাবে বিচার চেয়েও বিচার পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ছাত্রীটির বাড়ি গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে। বয়স আনুমানিক ১০ বছর। সে ওই স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা হোসনে আরা ছাত্রীটিকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার ঘরে কাজের মেয়ে হিসেবে রাখেন। শিক্ষিকা ও ছাত্রীটির বাড়ি পাশাপাশি। শিক্ষিকা হোসনে আরার স্বামী রাউজান উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাই তিনি বাড়ি থাকেন না। শিক্ষিকার ভাসুর আলী হোসেনও থাকেন সৌদি আরবে। ওই ভাসুরের এক ছেলে রয়েছে, যার নাম মো. মহিউদ্দিন। গত ২৮ জুন মুজিবখিল্যা এলাকায় স্থানীয় ৩ জন ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্যদের নিয়ে বৈঠক হয়। এসময় নির্যাতিত ছাত্রীটি মহিউদ্দিনকে তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারে দায়ী করেন। কিন্ত প্রভাবশালীদের আঁচড়ে ওই দরিদ্র ছাত্রীটির কথা কেউ আমলে নিচ্ছেন না বলে জানা যায়। মাতব্বরের কাছে মহিউদ্দিনের পরিবার ও সহকারি শিক্ষিকা হোসনে আরা দাবি করেছেন, জিনের কারণে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। জিনের আঁচড় ছাড়লে ঠিক হয়ে যাবে।
পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রশিদ বলেন, ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে ঘটনাটি সত্য। তবে মেয়েটির নাম ৫ম শ্রেণিতে থাকলেও এখন সে স্কুলে পড়ে না। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরটি আমরাই প্রথম ওই ছাত্রীর পরিবারকে জানিয়েছি। বর্তমানে ছাত্রীটি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক হোসনে আরা বলেন, আমি ছাত্রীটিকে অনেকদিন আগে ঘরে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখেছিলাম। এখন আমার বাড়িতে থাকে না। আমার ভাসুরের ছেলে মহিউদ্দিনকে ছাত্রীটি দায়ী করলেও ছাত্রীটির ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে কিছুই মিল হচ্ছে না। জিনের কারণে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। জিনের আঁচড় সারলেই মেয়েটি ভালো হয়ে যাবে।
গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে ছিলেন ৩ ইউপি সদস্য আব্দুর সোবাহান সিকদার, নুরুল হাকিম ও আব্দুল জব্বার। তারা বলেন, আমরা বৈঠকে নির্যাতিত ছাত্রীটির অপকর্মের হোতা খোঁজার জন্য বৈঠক করেছিলাম। মহিউদ্দিন নামের প্রবাসীর এক ছেলের নাম ছাত্রীটি বলেছে। কিন্তু বারংবার বৈঠকে জিনের কথা ওঠে আসায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। তবে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি।
গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাদশা বলেন, কিছুদিন আগেও গন্ডামারার বড়ঘোনা গ্রামে এক অন্তঃসত্ত্বা যুবতীকে জিনে মেরেছে বলে হত্যা করেছিল। আবারও ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জিনের আঁচড় বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।
বাঁশখালীর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয়রোধে আমি গ্রামে-গ্রামে গিয়ে অসংখ্যবার সভা-সমাবেশ করেছি। এসব অপকর্মরোধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নয়তো এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অসহায় ওই ছাত্রীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।