সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠ, বিজয় ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, বসার বেঞ্চ, ছোটখাটো একটা হ্রদও আছে পার্কটিতে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটির এখন হতশ্রী চেহারা। ইতোমধ্যে বেহাত হয়েছে বেশকিছু মূল্যবান জিনিষ, প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এটিকে গো-চারণ ভূমি বানিয়েছে আশপাশের লোকজন। এলাকাবাসী বলছে, এ দুরাবস্থা লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী সাবেক মহকুমা রামগড়ের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস ফিরিয়ে আনতে উপজেলা সদরে বিনোদন পার্কটি গড়ে তোলা হয়। প্রায় ৭ একর জমির ওপর লেকসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে ওই সময় খরচ হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্মারকমূলে নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ পার্কের জমি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তখন পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকতো পার্কটি। অল্পসময়ের মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি চিত্তাকর্ষক স্থান হিসাবে পরিচিতি পায়। কিন্তু ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উপজেলা প্রশাসন পার্কের মালিকানা দাবি করে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। সেই থেকেই উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
সাবেক ইউএনও অলি উল্লাহ ও রায়হান কাউসারের মতে, জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। সরকারি খাসজমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এখানে এর ব্যত্যয় ঘটায় জমির প্রশ্নে জটিলতা দেখা দেয়।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, উপজেলার পক্ষে মালিকানা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সাঁটানোয় তারা এ আর জমিতে যায়নি। দুই প্রশাসনের দড়ি টানাটানির সুযোগ নেয় সুযোগসন্ধানীরা। শোভাবর্ধক ২০০ বাতির সবগুলো চুরি হয়ে যায়। হ্রদে নামার কাঠ-লোহার তৈরি ঘাট ও ঝুলন্ত সেতুর পাটাতন, বেঞ্চের এসএস পাইপ ও পাইপের রেলিং চুরি হয়ে যায়। মারা যায় নানা প্রজাতির গাছ। চার লাখ টাকার বোট হ্রদে ডুবে নষ্ট হয়েছে।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোজাম্মেল হোসেন বাবলু জয়নিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পার্ক রক্ষায় ওইসময় লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর বলেন, রামগড়বাসীর বিনোদনে চমৎকার একটি পার্ক চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে গেল। এটা বেদনাদায়ক। পার্কটি রক্ষায় অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
সরকারি মালিকানাধীন হওয়া সত্ত্বেও পার্কটি এখন অভিভাবকহীন। পার্কের ভেতর স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য ‘বিজয়’ ও শহীদমিনার চত্বরে অবাধে গরু-ছাগল বিচরণ করছে। আশপাশের লোকজন পার্কটিকে গো-চারণভূমি বানিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, লোহার গেটসহ অন্যান্য জিনিষ চুরি হয়ে যাওয়ায় পুরো পার্ক এলাকা এখন অরক্ষিত। মাদকাসক্তদের আড্ডা বসে এখানে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত রামগড়ের একমাত্র বিনোদন পার্কটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে কিভাবে পার্কটিকে পূর্বাবস্থায় ফেরানোর পদক্ষেপ নেব। রামগড়কে পর্যটন নগরী করে তোলা হবে।
জয়নিউজ/আরসি