ভারতের বিরুদ্ধে ২৮ রানের পরাজয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সমীকরণ থেকে ছিটকে পড়ল বাংলাদেশ। ৩১৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৮৬ রানে অলআউট হয় মাশরাফি বাহিনী।
ওপেনিংয়ে নেমে তামিম-সৌম্য খেলছিলেন দেখেশুনে। মোহাম্মদ শামির বলে তামিম ২২ রানে বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙে এ জুটি। এরপর ব্যাটে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেন সৌম্য-সাকিব। দলীয় ৭৪ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে কোহলির হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য (৩৩)।
নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ভালোই খেলছিলেন সাকিব। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে মুশফিক (২৪) যখন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তখন দলের রান ১২১।
এই উইকেটের পর আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লিটন (২২), মোসাদ্দেক (৩) ও সাকিব (৬৬) ফেরেন অল্প রানের ব্যবধানে।
সাব্বির-সাইফুদ্দিনের জুটিতে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। কিন্তু দলীয় ২৪৫ রানে সাব্বির (৩৬) সাজঘরে ফিরলে জয়ের আশা কমতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত সাইফুদ্দিন ৫১ রানে অপরাজিত থেকে একপ্রান্ত আগলে রাখলেও তাকে সমর্থন দিতে পারেননি কেউ। মাশরাফি ৮, রুবেল ৯ ও মোস্তাফিজ ফিরেন শূন্য রানে।
ভারতের বোলারদের মধ্যে জাসপ্রিট বুমরাহ ৪টি ও হার্দিক পান্ডিয়া পান ৩টি উইকেট।
এর আগে মঙ্গলবার (২ জুলাই) বার্মিংহ্যামে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি ও লোকেশ রাহুলের ফিফটিতে উদ্বোধনী জুটিতে ভারত তোলে ১৮১ রান। এরপর সৌম্য-মুস্তাফিজ-সাকিবের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। ভারত নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে সংগ্রহ করে ৩১৪ রান।
বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ৩০তম ওভারে রোহিত শর্মাকে আউট করেন সৌম্য সরকার। সৌম্যের অফকাটারে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ নেন লিটন দাস। আউট হওয়ার আগে রোহিত শর্মা চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সংগ্রহ করেন ১০৪ রান। ৯২ বলের ইনিংসটিতে ছিল সাতটি চার ও পাঁচটি ছক্কা।
এর আগে ম্যাচের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে রোহিত শর্মার (৯) ক্যাচ ফেলে দেন তামিম ইকবাল। এরপর এই ওপেনার আর পিছু ফিরে তাকাননি। বাংলাদেশের বোলারদের সাবলীলভাবে খেলে নিজের ২৬তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত শর্মা।
দলীয় ১৯৫ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার রাহুল। রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। তার আগে ৯২ বলে ছয়টি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৭৭ রান। দলীয় ২৩৭ রানের মাথায় বিদায় নেন দলপতি বিরাট কোহলি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে মিড উইকেটে রুবেলের হাতে ধরা পড়েন আগের পাঁচ ইনিংসে টানা পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলা কোহলি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৭ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে কোহলি করেন ২৬ রান। এক বল পরেই বিদায় নেন হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ফিজ।
এরপর ইনিংস টেনে নিতে থাকেন রিশভ পান্ত এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। দলীয় ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে সাকিব ফিরিয়ে দেন রিশভকে। ৪১ বলে ছয়টি চার আর একটি ছক্কায় ৪৮ রান করে মোসাদ্দেকের তালুবন্দি হন রিশভ পান্ত। সাকিব নিজের শেষ ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেট পান।
ইনিংসের ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন দিনেশ কার্তিককে। ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিজের অফকাটারে কাটা পড়েন কার্তিক, ক্যাচ তুলে দেন মোসাদ্দেকের হাতে। দলীয় ২৯৮ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় ভারত। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ তুলে নেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সাকিবের হাতে ধরা পড়ার আগে ধোনি ৩৩ বলে চারটি বাউন্ডারিতে করেন ৩৫ রান। ওই ওভারেই রানআউট হন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ বলে মোস্তাফিজ বোল্ড করেন বুমরাহকে।
সাকিব নেন একটি উইকেট। মোসাদ্দেক হোসেন ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। সৌম্য সরকার ৬ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট। রুবেল হোসেন ৮ ওভারে ৪৮ রানে নেন একটি উইকেট। মাশরাফি ৫ ওভারে ৩৬ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি। সাইফউদ্দিন ৭ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
মোস্তাফিজ নেন পাঁচ উইকেট। এছাড়া সাকিব, সৌম্য ও রুবেল হোসেন নেন ১টি করে উইকেট।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন রোহিত শর্মা।