মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়াসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় ধসও হতে পারে বলে সতর্কবাণী দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে নগরের বিভিন্ন পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া লালখানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রও চালু করা হয়েছে বলে জয়নিউজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন।
জেলা প্রশাসক জয়নিউজকে বলেন, আমরা গত এক মাস ধরে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে বলেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও পরিচালনা করেছি। কিন্তু তবুও কেন মানুষ সেখানে বসবাস করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। কেউ যদি ইচ্ছে করে মরতে চান আমাদের কী করার আছে। আমরা শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করেছি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তারা চাইলে সেখানে আশ্রয় নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের অথবা ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী তিনদিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টির কারণে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পাবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জুনের পাহাড় ধসের পর ১২টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই বছরই আরও একটি এবং সর্বশেষ আরও ১৭টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত এই ৩০টি পাহাড়ের মধ্যে নগরের ১১টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করে ছয়শ’র বেশি পরিবার। এর মধ্যে লালখান বাজার এলাকায় মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ৩২০টি, একে খানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৮৬টি, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে ৫টি, লেকসিটি এলাকায় ১২টি, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকায় ২৭টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ২২টি, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে ১১টি, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে ৯টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৩টি ও জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি পরিবার বসবাস করছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।