পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমি আক্তার। পরিবারের সঙ্গে থাকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গম পাটিয়ালছড়ি ইউনিয়নে। বাসা থেকে তার স্কুলের দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার। রোজ এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে পৌঁছায় সে। আবার এ পথ পাড়ি দিয়েই বাসায় ফেরে। তবে এ দীর্ঘ পথ শিক্ষার প্রতি তার অদম্য আগ্রহে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কখনোই। তাই ঝড়-বৃষ্টি-তুফান, যাই হোক না কেন প্রতিদিন স্কুলে তার আসা চাই।
শুধু সুমি নয়, ফটিকছড়ির পাটিয়ালছড়ি আরটি চৌধুরী প্রাইমারী ও হাই স্কুলের সাড়ে ৫শ শিক্ষার্থীর প্রায় একই গল্প। নানা প্রতিকূলতা পার করে শিক্ষা লাভের জন্য তারা এ স্কুলে ছুটে আসে। আর তাদের মাঝে শিক্ষার প্রতি এ আগ্রহের বীজ বুনে দিয়েছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ফটিকছড়ির এ দুর্গম এলাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এ স্কুল। বিশেষ করে এলাকার দরিদ্র ঘরের সন্তানেরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হন, তাই স্কুলে চালু করেছেন অবৈতনিক ব্যবস্থা।
২০১০ সালে ফটিকছড়ির পাটিয়ালছড়িতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। নিজের বাড়ি ফটিকছড়ির ভুজপুরে হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে পাটিয়ালছড়িতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আশেপাশের চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তান। যারা কখনো চিন্তাই করেনি তারা কোনদিন স্কুলে যাবে।
মোট ৩৪০ গন্ডার (১৭ কানি) বিশাল জায়গা জুড়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত। সেমিপাকা ইংরেজি এল অক্ষরাকৃতির স্কুলটিতে বর্তমানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। স্কুলটির ফলাফলও বেশ ভালো। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এ স্কুল থেকে ১২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১১ জন। একজন অকৃতকার্য হয়েছে। ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ২৩ জন অংশ নিয়ে সবাই পাশ করেছে। একই বছরের পিএসসিতে ৩০ জন অংশ নিয়ে পাশ করেছে শতভাগ।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানাল, শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের পাঠদান করিয়ে থাকেন। আর বিনা বেতনের স্কুল হওয়াতে কোনো চিন্তা ছাড়াই তাদের মা-বাবারা তাদের এ স্কুলে পাঠায়।
দুর্গম এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা জানতে চাইলে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদে প্রায় ৩০ বছর আগে আমার নিজের প্রতিষ্ঠিত সারমন স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। তবে আমার সবসময় ইচ্ছে ছিল নিজের এলাকায় একটি স্কুল করার। কারণ ফটিকছড়িতে অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখানে শিক্ষার আলো দূরে থাক এখনো বিদ্যুতের আলোও পৌঁছায়নি।
তাই পাটিয়ালছড়ি আর টি চৌধুরী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি। স্কুলটি হওয়ার পর এখানকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পড়ালেখা করতে পারছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা হয়ত একদিন অনেক বড় হবে। সামনে স্কুলটিকে কলেজে উত্তীর্ণ করারও ইচ্ছে আছে আমার।
তিনি বলেন, কোনো লাভের আশায় এ স্কুল করিনি। শুধু এ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই আমার এ প্রয়াস। সমাজের বিত্তবানরা যদি এভাবে শিক্ষার প্রসারে এগিয়ে আসেন তাহলে দেশের একটি শিশুও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না।