টানা গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি। তবে টানা বৃষ্টিতে স্বস্তির সেই বৃষ্টিই এখন নগরবাসীর কাছে অস্বস্তির। ভারী বর্ষণে নগরজুড়ে এখন জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় নগরবাসীর জিজ্ঞাসা, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের সুফল কবে মিলবে?
বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নগরে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দেয়। নগরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলির কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি জমে যায়। গত বর্ষায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে এক বছর সময় চেয়ে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
তখন তিনি বলেছিলেন, বৃষ্টির পানি দ্রুত সরাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। এরই মধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা।
তবে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর কোনো সুফল এখনো দেখা যাচ্ছে না। নগরের কোনো এলাকায় কমেনি জলাবদ্ধতা।
সোমবার (৮ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, ২নম্বর গেট, জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, হালিশহর, ঈদগাঁও, কাতালগঞ্জ, বাটালি রোড, বাদুরতলা, ষোলশহর, খুলশি, বহদ্দারহাট ফরিদারপাড়া, তালতলা, খলিফাপট্টি, ঘাটফরহাদবেগ, বিআরটিসি, ফলমন্ডি, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, আগ্রাবাদ ও খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথাও হাঁটু পানি, তো কোথাও কোমরপানি।
বন্দর নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একটি মেগা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। চউকের নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে পরে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। এ প্রকল্পের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থাও কাজ করছে। এরপরও টানা বৃষ্টি হলে নগরে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও জলাবদ্ধতায় কষ্টে পড়ে গেলাম। কিছুদিন আগে বাড়ির পাশে চাকতাই খাল পরিষ্কার হওয়ায় ভেবেছি এ বছর অন্তত বৃষ্টি হলেও পানি কম উঠবে। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে আগের চেয়ে পানি বেশি উঠেছে।
কখন জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী- জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা জয়নিউজকে বলেন, চসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে ড্রেন-নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে চউক।
এদিকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে, এটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা কতটুকু নিরসন হবে- এর সঠিক চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভিসি মু. সিকান্দার খান।
তাঁর মতে, এ কাজে অনেক অভিজ্ঞ লোকবলের দরকার। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে আরও বেশি কথাবার্তা হওয়া উচিত। এতে দু’ভাবে লাভ হবে। প্রথমত, সরকার প্রকল্পটির বিষয়ে জনগণকে জানান দিতে পারবে। দ্বিতীয়ত, জনগণ তাদের চাওয়া-পাওয়া প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কাজ শুরু হয় জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের। কিন্তু এখনো জনগণ জানে না নির্মাণসূচি, খাল খনন, অবৈধ স্থাপনাগুলো কখন সরানো হবে। আমি সন্দিহান এমন বিশাল প্রকল্প তিন বছরে সম্পন্ন হবে কি-না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ জয়নিউজকে বলেন, সেনাবাহিনী যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে আশা করা যায়। তবে এর আগ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার হাত থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। এর মধ্যে রয়েছে যেসব এলাকায় পানি সরছে না সেসব এলাকার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ।