হাটহাজারীতে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া অবিরাম বৃষ্টির ফলে মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি।
উপজেলার ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, গড়দুয়ারা, মেখল এবং হাটহাজারী পৌরসভার কিছু কিছু এলাকায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিস্তীর্ণ এসব এলাকায় বন্যার তলিয়ে গেছে মৌমুসী ফসল ও খামার-পুকুর মাছ এবং দুইটি মহাসড়কসহ প্রায় ৩০-৪০টির মতো অভ্যন্তরীণ সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোল্টি খামারিরা।
উপজেলার সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। বন্যার কারণে উপজেলার অনেক গ্রাম অন্ধকারে নিমজ্জিত। এদিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নাজিরহাটের ঝুঁকিপূর্ণ হালদা সেতু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার মুন্সির মসজিদ এলাকা সিকি কিলোমিটার, ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর এলাকার আধা কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সহাসড়কের সুবেদার পুকুর পাড় এলাকায় মহাসড়ক দুইটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউপি পরিষদের কার্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্কুল, মাদরাসাতে পানি উঠে গেছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিতভাবে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাতের ভারি বর্ষণে হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট বাজারের দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে হালদা নদী এলাকার ছিপাতলী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আহসান লাভু সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, মাদরাসায় পানি ডুকেছে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অনবরত বৃষ্টি অপরদিকে হালদা নদীর মূল বেঁড়িবাধের একটি কালভার্ট হয়ে হালদা নদীর পানি ঢুকে পুরো এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। স্কুল, মাদরাসার পাঠদান বন্ধসহ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। অতি প্রয়োজনে নৌকাই একমাত্র মাধ্যম।
তবে হালদায় বর্ষার আগে বিভিন্ন খাল খননের কারণে এবার গতবারের চেয়ে বন্যা, জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম। দুর্যোগে এলাকাবাসীর জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার মাগরিবের পর থেকে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও পাহাড়ি ঢলের পানির কারণে গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় যুবক জাহেদুল আলম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, শুক্রবার মাগরিবের পর থেকেই রাস্তাঘাট ডুবে আমাদের বাড়ি-ঘরে দুই তিন ফুট করে পানি উঠে গেছে। অনবরত বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢল আর চারদিক থেকে নেমে আসা হালদার পানি ফেঁপে উঠায় বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্যার পানি বেড়ে চলছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও দুর্গতদের সহায়তার আশ্বাস জানিয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার কিছু ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবেলায় আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা ইউনিয়নের প্রতিটা চেয়ারম্যানকে ডি (চাহিদা) ফর্ম দিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনমতো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সে সব বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুরির ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত ৪০০ পরিবারকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৪০০ বস্তা ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।
এছাড়া বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে উদ্বারকর্মী ও চিকিৎসক দল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।