চট্টগ্রামে চিকিৎসার নামে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে তার দপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হৃদপিণ্ড। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, চট্টগ্রামের এই বিপুল জনগোষ্ঠী পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই ধারণ ক্ষমতার অধিক রোগী ভর্তি হয়। সিট স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ রোগীকে মেডিকেলের ফ্লোরে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।
সরকারও নিয়মিত যন্ত্রপাতি ও ওষুধপথ্যের সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নেই জনগণের কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ দালালরা নানা কায়দা কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
তিনি আরো বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে গিয়ে সাধারণত রোগীদের চিকিৎসা পরবর্তী বিলের ব্যাপারে কোনো ধারণা থাকেনা।
তারপরও রোগীর স্বার্থে স্বজনরা যখনই এসব ক্লিনিকে রোগীকে ভর্তি করে তখনই হাসপাতালগুলো রোগীর কিংবা রোগীর স্বজনদের টুটি চেপে ধরে। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবহেলার সুযোগে প্রাইভেট ক্লিনিক ও চিকিৎসকের অযথা ল্যাবরেটরি টেস্ট করানোর নামে প্রতিদিন গলা কাটছে নাগরিকদের।
সাধারণ রোগের জন্যও চিকিৎসকেরা বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে রোগীদের পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এছাড়াও রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত সিজার। আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিওর ব্যাপারে রোগীদের সম্যক ধারণা না থাকলেও রোগীদের দিনের পর দিন রেখে অযথা বিল আদায় করা হচ্ছে। টেস্টের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, চরম দুর্ব্যবহার, টাকার জন্য লাশ আটকে রাখা, নানা ছুঁতোয় রোগীদের জিম্মিসহ শত শত অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া যায়। যা চিকিৎসা সেবার নামে নৈরাজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি আরো বলেন, এভাবে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই তাই বিপুল সংখ্যক মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে। এতে করে দেশের চিকিৎসা সেবার প্রতি মানুষের দিন দিন অনাস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে, বিপুল সংখ্যক মুদ্রা বিদেশে খরচ করছে রোগীরা। যা দেশের অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য জনগণ কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত তদারকির কারণে তাদের ক্লিনিকগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমাদের সরকারও যদি এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আমাদের দেশের রোগীরা ন্যায্যমূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি দাবিগুলোর সঙ্গে মত প্রকাশ করেন এবং এসব দাবি বাস্তবসম্মত বলে অভিহিত করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় জনগণকে সুলভে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যে প্রয়াস চলমান রয়েছে সে প্রয়াসে নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি সদস্যকে সামিল হওয়ার অনুরোধ জানান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন, মোরশেদ আলম, এজাহারুল হক, দেলোয়ার হোসেন সিরাজ, মো. শাহজাহান, সোলেমান সুমন, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, জমির উদ্দিন মাসুদ, সমীর মহাজন লিটন, মো. নাছির উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, শিশির কান্তি বল, স্বরূপ দত্ত রাজু, মো. ওয়াসিম, সরওয়ার্দী এলিন, মাহফুজ চৌধুরী, আব্দুল জাহেদ মনি, মোজাম্মেল হক সুমন, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ, এস এম সাফায়েত হৃদয় ও তাজউদ্দিন তাজু।