চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকবার মেয়র প্রার্থী হতে চান এম মনজুর আলম। তবে কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা ঠিক হয়নি এখনো। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু মনজুর এই ‘প্রত্যাবর্তনকে’ স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। কেউই তাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
কাউন্সিলর থেকে মেয়র, রাজনীতির পুরনো মুখ
১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন মনজুর আলম। সেই সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
পরে ২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন মনজু। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মনজুরের কাছে হেরে যান তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন মনজু। পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।
২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবার বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হন। তবে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম। যদিও এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়।
আবার ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলম। এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন।
কারণ মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সবসময়।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মনজু। চট্টগ্রাম-৪ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হতে ধানমণ্ডি গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। অনেক তদবির করার পরও তার কপালে জোটেনি মনোনয়ন।
এবারও প্রার্থী হতে যোগাযোগের গুঞ্জন
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে মনজু দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তাদের মধ্যে একজন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য (চট্টগ্রামের সন্তান)। অন্যজন বিএনপির নীতি নির্ধারক ফোরামের সদস্য।
বিশ্বাস হারিয়েছেন দুই দলেই
মনজু যখন আবার আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন, ঠিক সেই সময়ে দেশের দুই বড় দলের কেউই তাকে বিশ্বাস করছেন না। তাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, দুই দলেই চরম বিদ্রোহ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকে।
মনজু মেয়র প্রার্থী হতে চাইছেন কি-না, এমন প্রশ্ন করা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার কাছে। দুই দলের নেতারা জয়নিউজের যুগ্ম সম্পাদককে উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘মনজু কি কোনো দল করেন? তাকে বিশ্বাস করা মানে সাপের কামড় খাওয়া!’
অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আগেই বলেছিলেন, মনজুরকে বিশ্বাস করা কঠিন।
মনজুর মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে তখন হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, মনজুকে বিশ্বাস করা আসলেই খুব কঠিন। তিনি (মনজু) কোন দল করেন নিজেও জানেন না। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ, আবার কখনো বিএনপির। এভাবেই তিনি (মনজু) রাজনীতি করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আবার ক’দিন পরেই হয়তো দেখা যাবে তিনি বিএনপিতে চলে যাচ্ছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম জয়নিউজকে বলেন, ‘মনজুকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী করার প্রশ্নই আসে না। বিএনপিতে কি মানুষের অভাব হয়েছে? তিনি (মনজু) কোন দল করেন কেউ জানে না। যদি তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেন তা হবে অলীক কল্পনা।’
নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন জয়নিউজকে বলেন, ‘মনজুর ব্যাপারে মন্তব্য না করাই উচিত। নৈতিকতা সবার মধ্যে থাকা চাই।’
এ বিষয়ে এম মনজুর আলম জয়নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন করার ইচ্ছে তো সবারই থাকে।’ তবে কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।