প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারা দিবস আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই)। ২০০৭ সালের এই দিনে সেনা সমর্থিত সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার দিনটি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর কাছে শোকের দিন হিসেবে পরিচিত।
অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সদ্যগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ বিজয় মিছিল করার জন্য এ দিনটিকেই বেছে নিয়েছেন! এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে চবি স্টেশন চত্বর থেকে একটি আনন্দ মিছিল শুরু হয়ে কাটাপাহাড় সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সদ্যগঠিত শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করেন।
কমিটিতে সভাপতি করা হয় ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল হোসাইন টিপুকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র টিপু নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
ইতোমধ্যেই কমিটির সভাপতি রুবেলের বয়স ও ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এবার যোগ হলো শোকাহত নেতাকর্মীদের সামনেই ঢাকঢোল পিটিয়ে, আতশবাজি করে আনন্দ মিছিলের ঘটনা। এতে বিরূপ মন্তব্য করছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা।
এদিকে সভাপতির ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার’ ও সাধারণ সম্পাদকের ‘সিক্সটি নাইন’ ছাড়া ছাত্রলীগ সমর্থিত ‘বিজয়’সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি গ্রুপ-উপগ্রুপ মিছিলটি বর্জন করেছে। তবে সাধারণ সম্পাদকের দাবি, শোককে শক্তিতে পরিণত করতেই তাদের এই আয়োজন।
চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল জয়নিউজকে বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীর কারা অভ্যন্তরীণ দিবস। এই দিনে এইরকম ঢাকঢোল পিটিয়ে মিছিল করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা হতবাক হয়ে গেছি! যেখানে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া সেখানে এরকম আনন্দ মিছিল না করলেও হতো। এটা তো একদিন আগে বা পরেও করা যেত। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তাদের কাছ থেকে এই ভুল সিদ্ধান্ত আমরা আশা করিনি।
আরেক ছাত্রলীগ নেতা মারুফ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করেছিলাম যোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরে চবি ছাত্রলীগ আবারো ঐক্যবদ্ধ হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আজকে শোকের দিনেই তারা বিজয় মিছিল করেছে। এটা নেতৃত্বের ভুল। আজ শোকের দিন, এটা উনাদের মাথায় থাকা উচিত ছিল। তাদের থেকে আমরা এটা আশা করি নাই।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সদ্যগঠিত কমিটির সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ‘আমরা প্রেস রিলিজ দিব’ বলে কল কেটে দেন তিনি।
তবে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন টিপু বলেন, যারা ছাত্রলীগ করে তারা আসবে আমাদের সঙ্গে। আর রাজনীতি তো প্রতিযোগিতার জায়গা। পদ না পেয়ে এখানে কারো মন খারাপ থাকার কারণে কেউ মিছিলে নাও আসতে পারে।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। আজকের দিনে আমাদের বিজয় মিছিলটা এই জন্যই করা, শোককে আমরা শক্তি হিসেবে প্রকাশ করেছি। চবি ছাত্রলীগ দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করে আজকের দিনের বিজয় মিছিল করেছে। আমাদের কর্মসূচিতেও জননেত্রীর জন্য মিলাদ মাহফিলও ছিল। তার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আমরা দোয়া করব।