নগর ছাত্রদলের এখন কঠিন অবস্থা। অর্ধযুগ আগে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর চেয়েও বড় ব্যাপার ১১ জনের এই কমিটির ৯ জনই এখন দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে। একজন মারা গেছেন। আর একজন আছেন, যিনি এখনো শুধু ছাত্রদলেই আছেন।
২০১৩ সালে নগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠনের পর তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। কিন্তু অর্ধযুগেও এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো ছাত্রদলের দায়িত্ব বহাল রেখে বিএনপির অন্য সংগঠনে যোগ দিয়েছেন নেতারা!
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। যার মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি ৪ জন সহসভাপতি ও ৪ জন যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ঘোষিত ১১ জনের কমিটির মধ্যে একজন মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে ৯ জন যোগ দিয়েছেন বিএনপির অন্য অঙ্গসংগঠনে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১ জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৭ মে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল। এছাড়া সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ যোগ দেন বিএনপিতে। তিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। আবার সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বর্তমানে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।
এছাড়া নগর ছাত্রদলের চার সহসভাপতির মধ্যে তিনজনই অন্য অঙ্গসংগঠনেরও দায়িত্বে রয়েছেন। এরমধ্যে মঈন উদ্দিন শহীদ বর্তমানে নগর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, ফজলুল হক সুমন নগর যুবদলের সহসভাপতি এবং জিয়াউর রহমান জিয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। চার যুগ্ম সম্পাদকও আছেন বিভিন্ন পদে। জমির উদ্দিন নাহিদ স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক, আলী মুর্তুজা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং মোশাররফ হোসেন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সহসভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী একমাত্র ব্যক্তি যিনি এখন পর্যন্ত কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হননি।
জানা গেছে, দলীয় কোনো কর্মসূচি থাকে না ছাত্রদলের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটির। এমনকি গত ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও পালন করেনি নগর ছাত্রদল। শুধু নগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী জসিম উদ্দিন হিমেলের নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন তাঁর অনুসারীরা।
জসিম উদ্দিন হিমেল জয়নিউজকে বলেন, কোনো এক অজানা কারণে নগর ছাত্রদলের কমিটি হচ্ছে না। এটা নিয়ে রীতিমতো তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করছে। বিএনপির জন্য অশুভ সংকেত হিসেবে বলা যায় এটাকে। এমন দুর্দিনে ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ করতে গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি দেওয়া উচিত। আমি সিনিয়র নেতাদের কাছে অনুরোধ করব- যত দ্রুত সম্ভব নগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করুন।
নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকা-ঝিমিয়েপড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু জয়নিউজকে বলেন, আমি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। এ পদে আসার পর থেকে ছাত্রদলের কর্মকা- পরিচালনা করি না। কেন্দ্রকে বারবার বলেছি, নতুন কমিটি দিতে, কিন্তু দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, নগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণেই মহানগর ছাত্রদলের কমিটি হচ্ছে না। মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ করব, যারা যোগ্য ও আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন তাদের মধ্য থেকে ছাত্রদলের নেতৃত্ব বাছাই করে দ্রুত নগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করুন।
একই প্রসঙ্গে নগর ছাত্রদল সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, আমি বর্তমানে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। তাই ছাত্রদলের কার্যক্রম নিয়ে সময় দিতে পারছি না। নগর ছাত্রদলের অবস্থা খুবই করুণ। একজন ছাড়া বাকিরা বিভিন্ন কমিটিতে আছেন। নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা দরকার এবং সেটা দ্রুত করতে হবে। বিএনপিকে স্টাবলিস্ট করতে হলে ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সহসভাপতি শাহেদ আকবর বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ছাত্রদল নাই-ই। এটা তো মৃত। তাদের কোনো কর্মকা- আছে? নেতাদের কেউ বিএনপিতে, কেউ সেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়েছেন। এখন দরকার যোগ্যদের নিয়ে ছাত্রদল গঠন করা। অন্যথায় ছাত্রদল যোগ্য নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে।
এদিকে নগর ছাত্রদলের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নগরে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০০৩ সালে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ছাত্রদলের দুই নেতার সমর্থকদরে মধ্যে সংঘর্ষের পর কয়েক বছর বিলুপ্ত ছিল নগর কমিটির কার্যক্রম। এরপর ২০১০ সালের ১০ আগস্ট নতুন কমিটি গঠনের জন্য সপ্তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলেও সেই ফলাফল প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর ২০১৩ সালে যে কমিটি গঠন করা হয় তাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নয়।