দেশের সর্বত্র এখন অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীদের দাপট। তেল, দুধ, ঘি থেকে শুরু করে প্রায় সব খাবারেই মেশানো হচ্ছে ভেজাল। অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে পঁচা-বাসি খাবার। মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযান হয়। করা হয় জরিমানা। কিন্তু ভেজাল খাবারের লাগাম টেনে ধরা যায় না।
অথচ খাবারে ভেজালরোধে কঠোর আইন আছে। আছে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় অংকের জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে বিচার।
তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের সর্বত্র এখন খাবারে ভেজালের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগের দাবি উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষক, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কত্থিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর মিলছে নিয়মিত। প্রশ্ন উঠেছে, অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এমন খবর মেলে না কেন? কেন শুধু জরিমানা করেই দায় সারা হয়? কেন আইনে বিধান থাকা সত্ত্বেও খাবারে ভেজালের অপরাধে দেওয়া হয় না সর্বোচ্চ দণ্ড?
প্রায় প্রতিটি খাদ্যেই মিশছে ক্ষতিকর উপাদান
বছরের পর বছর ধরে খাদ্যে ভেজাল দেওয়াসহ রাসায়নিক বিষ মেশানো চলছেই। ফরমালিন, কার্বাইড, ইউরিয়া সার, হাইড্রোজসহ নানা ক্ষতিকর ও রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে। কিন্তু অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
আইন কী বলছে?
২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনে খাবারে ভেজাল দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। এছাড়া ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড চান র্যাবের ডিজি
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ গত ২৭ জুন রাজধানীতে এক কর্মশালায় বলেন, দামী রেস্টুরেন্ট থেকে রাস্তার দোকান, সর্বত্র এখন ভেজাল খাবার বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল খাদ্য ব্যবসায়ীরা নীরব ঘাতক, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।
বেনজীর আহমেদ বলেন, খাদ্যের প্রতিটি স্তরে ভেজাল হচ্ছে, জালিয়াতি হচ্ছে, বিষাক্ত খাবার বিক্রি ও খাওয়ানো হচ্ছে। আমি বিনীত অনুরোধ জানাবো, আমাদেরকে বিষাক্ত খাবার খাওয়াবেন না। বিদেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিষাক্ত খাবার আমদানি করবেন না।
খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান হাইকোর্টের
মাদকের মতো খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি বিএসটিআই’র পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ৫২টি পণ্য বাজার থেকে সরানোর নির্দেশে দেওয়া আদেশে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।