উত্তরপাড়া এখন উন্নয়নমুখী

‘আমাদের তো কোনো কিছু হলে সব উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।’ উক্তিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সম্প্রতি তিনি সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি যারা শ্রেণীগতভাবে জনভিত্তিহীন, তাদেরকে উদ্দেশ করে এই কথা বলেন।  কে না জানে, এই ‘উত্তরপাড়া’ কি এবং কোথায়? এর আগে আরো একবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবরোধ-হরতাল চালিয়ে অসাংবিধানিক কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় আনা যাবে না।  উনি উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে আছে’।

- Advertisement -

কারা এই উত্তরপাড়া?

- Advertisement -google news follower

ঢাকার উত্তরে ক্যান্টমেন্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।  প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। এ ছাড়াও তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।

- Advertisement -islamibank

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় পুরো বাহিনী গর্বিত বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও আধুনিকায়নে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে শুধু মিলিটারি একাডেমি নয় গত ৭ বছরে বর্তমান সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি গতিশীল, চৌকস এবং যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এবার আমরা দেখি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূলস্রোতে কিভাবে অংশ নেয় তার একটি চিত্র।  রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক মহড়া থেকে শুরু করে শরণার্থী আশ্রয় শিবিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা প্রশংসিত।  কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্প এলাকার লাখো রোহিঙ্গাদের চোখে দুই দেশের দুই সেনাবাহিনীর চিত্র এখন নিত্য ভাবনার বিষয়।  আর এসব কিছু সম্ভব হচ্ছে কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার ফলেই।

দেশের অন্যতম সেরা উন্নয়ন নির্মাণযজ্ঞ পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে রেল যোগাযোগ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শকের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজের সুষ্ঠু তদারকিসহ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যথাসময়ে কাজ শেষের ব্যবস্থা করবে সেনাবাহিনীর কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট সেল (সিএসসি) অব কোর অব ইঞ্জিনিয়ারিং।

পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের খাল, সবকিছুর উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে উত্তরপাড়া। চট্টগ্রামের ১৩টি খালের সঙ্গে সংযুক্ত নালা সংস্কারের কাজ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে মেগা প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

এদিকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৫শ’ শয্যার বার্ণ ইনস্টিটিউটটি এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের লাইফলাইন হালদা নদীর তীরেও ভিড়েছে সেনাবাহিনীর উন্নয়নের তরী। সেনা তত্ত্বাবধানে হালদা নদীর ভাঙনরোধ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন হয়েছে সম্প্রতি। চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের অসমাপ্ত কাজ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সম্পন্ন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে সেনাবাহিনী।

মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফ্লাইওভারসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো দক্ষতা, সততা ও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী।

আমরা জানি, আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার।  ৫ কোটি মানুষ মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশ নেমে এসেছে। আমাদের রিজার্ভ ২৭.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সক্ষম হবো।

এগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবনার বাস্তবায়ন। যিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে সম্প্রতি বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।  আমাদের সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে সেনাবাহিনীকে উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপাড়াকে নিয়ে বিশেষ একটি মহল নানা রঙ ছড়াচ্ছে।  মূলত বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ চক্রান্ত। কিন্তু হালের বাস্তবতা হলো উত্তরপাড়া আছে উত্তরেই।  তাদের চিন্তা-ভাবনাজুড়ে আছে শুধু সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। উত্তরপাড়া এখন আর ক্ষমতামুখী নয়, তারা এখন শুধুই উন্নয়নমুখী।

লেখক: সম্পাদক, জয়নিউজবিডি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM