ডেঙ্গু আতঙ্কে পিছিয়ে নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলায় নগরবাসী এবং উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এখনো রাজধানী ঢাকার মতো আতঙ্কিত হওয়ার কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪১ জনে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৮০ জন, কক্সবাজারে ৪ জন, খাগড়াছড়িতে ৫ জন, ফেনীতে ৮ জন, কুমিল্লায় ৩১ জন, চাঁদপুরে ৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন এবং নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে।
এদের মধ্য থেকে বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া নগরের সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে একজন, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চারজন, ইউএসটিসিতে একজন, রয়েল হাসপাতালে একজন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দুইজন, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে তিনজন, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজে একজন ও ইসলামিক কলেজ মেডিকেল হাসপাতালে একজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা করে চিকিৎসা দিচ্ছে চমেক হাসপাতাল। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটের প্রতিটিতে ২০ শয্যা করে মোট ৬০ শয্যার ডেঙ্গু ব্লক খোলা হয়েছে। এসব ব্লকে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টাঙিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য সরবরাহে নতুনভাবে একটি করে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে আলাদাভাবে এ বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাসহ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখতে দেখা গেছে।
আগে ঢাকা ফেরত রোগীদের শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়লেও এখন যারা ঢাকা যাননি, এমন ব্যক্তির শরীরেও ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের এক ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, প্রথমদিকে ঢাকা ফেরত রোগীদের শরীরের ডেঙ্গু পাওয়া গেলেও এখন চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা, যারা সম্প্রতি ঢাকা যাননি তাদের শরীরেও ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘরের আশপাশের নালা-নর্দমা ভালো মতো পরিষ্কার রাখায় মনোযোগী হতে হবে। মোটকথা, এডিস মশার বংশ বিস্তার যাতে না ঘটে সেদিকেই নজর দিতে হবে।
এদিকে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে চট্টগ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সর্দি-জ্বর হলেও কেউ কেউ ডেঙ্গু মনে করে ছুটছেন হাসপাতাল-ক্লিনিকে।
বুধবার সকালে নন্দনকানন থেকে সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা কলেজছাত্র মো. শামীম জয়নিউজকে বলেন, একদিন ধরে সর্দি-জ্বরে ভুগছি। তাই ভয়ে পরীক্ষার জন্য চলে আসলাম। চারদিকে যেভাবে ডেঙ্গু হচ্ছে, ভয় পাচ্ছি। এরমধ্যে ঢাকা যাইনি, তবুও ভয় হচ্ছে। তাই পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হতে চাই।
একই হাসপাতালে কলেজছাত্রী তামান্না তার মাকে নিয়ে আসেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। তার মা সালেহা বেগম বলেন, মেয়ে তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তাই খুলশী থেকে এখানে পরীক্ষা করানোর জন্য চলে এসেছি।
তবে চট্টগ্রামে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এখনো রাজধানী ঢাকার মতো আতঙ্কিত হওয়ার কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন বলে জয়নিউজকে জানান তিনি।
এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চসিক। নগরবাসীকে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চসিকের পক্ষ থেকে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও এডিস মশা নির্মূলে স্প্রে করা হচ্ছে।