গোপনীয়তা শব্দটি যেন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে সমার্থক হয়ে উঠেছে। সাধারণত শুক্রবার এলে সাংসদরা নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় ফিরে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছিলেন যেন মন্ত্রীরা সবাই দিল্লিতেই থাকেন। কারণ সোমবার দিল্লি পৌঁছাতে অনেকের দেরি হয়।
শনি ও রোববারের ছুটি বাতিল করে কেন সাংসদদের প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাকা হয়েছিল, তা তাদের অনেকে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন, মোদি-অমিত শাহ খন সংসদে আসেন তাঁদের সঙ্গে তখন শুধু সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ছিলেন। বাকি ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ছিলেন। অধিবেশন শুরুর আধঘণ্টা আগেও সংসদে আসার ছাড়পত্র পাননি তারা। কারণ পুরো ঘটনাই খুব গোপন রাখা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আসেন। এরপর আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাকি মন্ত্রীরা একেবারে শেষমুহূর্তে উপস্থিত হন।
এক মন্ত্রী হেসে বলেন, এমনটা যে হবে সেটা সকাল সাড়ে ৮টার আগেও ঘুণাক্ষরে জানতে পারিনি। ১১টা পর্যন্ত কাউকে বলা নিষেধ ছিল। বিলে ঠিক কী কী আছে কেউ জানতেন না।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জম্মুর ‘বড়’ নেতা হিসেবে পরিচিত। সাংসদদের কর্মশালায় ছিলেন তিনিও। কিন্তু এক ধাক্কায় ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেওয়া হবে, সেটা তিনিও টের পাননি।
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম বড়জোর ৩৫-এ অনুচ্ছেদ সরানো হতে পারে। সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন ছাড়াও যে অন্য পথে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তোলা যেতে পারে সে ব্যাপারে ধারণা ছিল না।
কয়েকদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ানো হয়, তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ফেরত পাঠানো হয়। উপত্যকার নেতাদের যখন গৃহবন্দি করা হয় তখনই কাশ্মীর নিয়ে ‘কিছু একটা হচ্ছে’ এমনটা আঁচ করতে পারছিলেন সবাই।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি বিদেশ সফর শেষ করে দেশে ফিরেই যে কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করবেন, সেটা ভাবনার বাইরে থেকে গিয়েছিল শাসকদলের বড় অংশেও।
অমিত শাহ যখন বেশকিছু কাগজপত্র নিয়ে সংসদে ঢোকেন, হাসিমুখে ঘুরে ঘুরে ছবিও তুলছিলেন। তখনই প্রথম আভাস মেলে, কাশ্মীর নিয়ে বড় কোনো ঘোষণা আসতে চলেছে।
জয়নিউজ/আরসি