অস্থায়ী দুই শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করা কিংবা চাকরিরত শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, নিয়ম মানা হয়নি কোনো ক্ষেত্রেই। নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি তিনজন জুনিয়র শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও। এককথায় নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে সবখানেই।
এত অভিযোগের অভিযুক্ত মানুষটির নাম গাজীউল হক। তিনি চট্টগ্রামের সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে তাঁর পেছনে খুঁটির জোর হয়ে আছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আবদুচ ছালাম স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজীউল হক একের পর এক অনিয়ম করে গেছেন। তার স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেউ, আবার অনিয়মের কারণে অন্যায় সুবিধা পেয়েছেন অনেকে।
অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার যত অভিযোগ
অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজীউল হক তিনজন জুনিয়র শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেন।
নিয়মানুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণের এক বছর পর ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার কথা থাকলেও যোগদানের পরের বছর থেকেই এ সুবিধা নিচ্ছেন গাজীউল হক।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির পঞ্চম সভায় কার্যবিবরণী পরিবর্তনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মভঙ্গ করে অস্থায়ী দুই শিক্ষককে চাকরিতে স্থায়ী করা এবং আবদুচ ছালামের গাড়িচালক জলিলের স্ত্রী মাহিনুর বেগম ও শালী সুরমা বেগমকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অনিয়মের শুরু যেখানে
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই গাজীউল হক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনাধীন সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেই থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুচ ছালামের সমর্থনে তিনি নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম নিয়ে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলেই তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এমনকি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নজিরও রয়েছে। ফলে প্রধান শিক্ষকের শত অন্যায়েও কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। বরং তাঁর অন্যায় ও অনিয়মতান্ত্রিক আবদার রক্ষা করে চলেন সবাই।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের রোষানলের শিকার হয়েছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা। প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মে সহায়তা ও সায় না দেওয়ায় শাহীনকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর অংশ হিসেবে গত ২৩ জুন তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে অনুমোদন দেন আবদুচ ছালাম। অথচ নিয়মানুযায়ী পদাধিকার বলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। মোটকথা এক্ষেত্রে নিয়মের বড় ধরনের হেরফের হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকে শাহীন সুলতানাকে বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা জয়নিউজকে বলেন, অকারণে আমার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী কাজে সমর্থন না দেওয়ায় তিনি এমনটি করেছেন। ভুল বুঝিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে।
তিনি বলেন, যদি আমার কোনো অন্যায় থেকেও থাকে নিয়মানুযায়ী শোকজ করার কথা। তাও করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজীউল হকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, কারো কারো স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরাও কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ জয়নিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে সম্প্রতি আমি অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।
তবে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গাজীউল হক। তিনি জয়নিউজকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যা কিছু করা হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আমি কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এনটিআরসিএ’র (নন গভর্মেন্ট টিচার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড সার্টিফিকেশন অথরিটি) নিয়মানুযায়ী হয়েছে।
শাহীন সুলতানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সার্বিক বিবেচনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহিদা ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে শিক্ষা বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।