বোর্ড সদস্যদের বিরোধীতা সত্ত্বেও পানির দাম বাড়াল ওয়াসা

আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সার স্থলে ১৬ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড।

- Advertisement -

একইসঙ্গে বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম ২৭ টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ৪০ টাকা করার করার প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) ওয়াসার বোর্ডসভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

- Advertisement -google news follower

তবে এ সিদ্ধান্তকে গ্রাহক স্বার্থবিরোধী বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। খোদ ওয়াসার বোর্ড মেম্বাররাও এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন।

ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে ওয়াসা বোর্ড। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল ওয়াসা। অথচ ৬ মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার পানির দাম বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। তাও গড়ে প্রায় ৬২ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নগরজুড়ে।

- Advertisement -islamibank

ওয়াসার বোর্ড মেম্বার ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী জয়নিউজকে বলেন, ‘এখন পানি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। নগরের অনেক জায়গায় ভালোভাবে পানি পাওয়া যায় না। এর উপর পুরো নগরে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে জনগণ অতিষ্ট। ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে মানুষ যখন তাদের চাহিদামতো পানি পাবে তখন পানির দাম বাড়ালে ভালো হতো। আমি বোর্ডসভায় পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দর খান জয়নিউজকে বলেন, ‘সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওয়াসা পানির দাম বাড়াচ্ছে। এটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝার মতো। আসলে তারা জনগণের ভালো চায় না। তাই জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ওয়াসার বোর্ডসভায় পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ বলেন, ‘পানির দাম বাড়ালে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে। সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এছাড়া ওয়াসা এখনো পুরোপুরি সেবা দিতে পারছে না। সরকার বেকায়দায় পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন জয়নিউজকে বলেন, ‘পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ওয়াসা কতটুকু পানি উত্তোলন করে, কীভাবে করে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো হিসাব নেই। সংস্থাটি সেবার মান না বাড়িয়ে কিছুদিন পর পর পানির দাম বাড়াচ্ছে। সেবায় যদি সন্তুষ্ট না হন তবে গ্রাহক বাড়তি টাকা দেবে কেন?’

পানির দাম বাড়ানো নিয়ে এত বিরোধীতা থাকলেও চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে অনুমোদন হলে নতুন দাম কার্যকর হবে।’

দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আগে ভূ-গর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলন করতো ওয়াসা। এখন ভূ-উপরিস্থ পানির দিকে ঝুঁকছে। ভূ-উপরিস্থ পানি আলাদাভাবে শোধন করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ পানির দাম রয়ে গেছে আগের মতো।’

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, ‘দাম বাড়নোর আমরা কে। আমরা বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি যে আমাদের উৎপাদন খরচ কত। আমরা চাই ধাপে ধাপে পানির দাম বৃদ্ধি পাক। কারণ পরবর্তীতে গিয়ে যদি এক লাফে পানির দাম বৃদ্ধি পায় তখন আরো বেশি জনরোষ সৃষ্টি হবে।’

জয়নিউজ/বিপি/এমজেএইচ
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM