বাঙালি জাতির শোকের দিন ১৫ আগস্ট আজ। একদল বিপথগামী সেনাসদস্য ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। জয়নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা কলঙ্কিত সেই দিনটিকে নিয়ে বলেছেন অনেককিছুই। বিশেষ এ আয়োজনের শেষ পর্বে থাকছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের স্মৃতিচারণ…
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার খবর প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম।
বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁর মা-ও। পরে এম এ সালাম নিজেও এ খবর শুনেছেন জানানোর পর তাঁর মা বলেছিলেন, ‘যে দেশে জাতির জনককে হত্যা করা হয়, সে দেশে রাজনীতি করে লাভ কী?’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে জয়নিউজকে এসব কথা বলেন তিনি।
এম এ সালাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। সকালে আমাকে আমার মা স্থানীয় হাটে বাজার করতে পাঠিয়েছিলেন। হাটে গিয়ে দেখি অনেক লোক একসঙ্গে জড়ো হয়ে মনোযোগ দিয়ে রেডিও শুনছিলেন।
কাছে যেতে শুনি কর্নেল ফারুক রেডিওতে ঘোষণা দিচ্ছেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত কেউই একথা বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমিও হঠাৎ একথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আম্মা আমাকে বাজার করতে পাঠিয়েছেন। পরে বাজার করে ঘরে ফেরার পর আম্মা আমাকে খবরটির সত্যতা জিজ্ঞেস করেন। তিনিও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন আম্মাকে জানাই আমিও বাজারে খবরটি শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তখন নগরের সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। বয়স ১৯-২০ বছর হবে। রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। তবে বড় কোনো পদে ছিলাম না তখন। মিছিল-মিটিংয়ে যেতাম। আমার আম্মা সেটা জানতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা শুনে তিনি তখন আমাকে বলেছিলেন, যেদেশে জাতির জনককে এভাবে হত্যা করা হয় সে দেশে আর রাজনীতি করে কী হবে। তুই আর রাজনীতি করিস না।’
তিনি বলেন, ‘আমার আম্মা কোনো রাজনীতি করতেন না। একজন সাধারণ গৃহিণী হিসেবেই তিনি একথা বলেছিলেন। একথা থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কথা শুনে দেশের মানুষের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।’
তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার এ শোককে শক্তিতে পরিণত করে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। অনেকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন। ঘরোয়া রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশ এখন অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হত্যাকারীরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই তাঁর সব কৃতিত্ব মুছে যাবে। কিন্তু জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। সেটি এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষ জানে।’