আজ তিনি যদি পৃথিবীতে থাকতেন পূর্ণ করতেন ৫৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্ম। ১৯৭৩ সালে তার বাবা তাকে তার ১১তম জন্মদিনে একটি গীটার উপহার দেন। একদিন কেবা জানতো দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়বে বাঙালিদের হৃদয়ে।
আইয়ুব বাচ্চুর ১৯৭৬ সালে কলেজ জীবনে ‘আগলি বয়েজ’ নামক ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে তার সঙ্গীত জীবনের পদার্পণ। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল সে তার নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করে, যা পরবর্তীকালে লাভ রান্স ব্লাইন্ড নামে বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিল গাঁটছড়া।
একজন এককশিল্পী হিসেবেও তিনি সফলতা পেয়েছিলেন। তার প্রথম একক অ্যালবাম রক্ত গোলাপ ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর দ্বিতীয় অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮) এবং কষ্ট (১৯৯৫) বের করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
ছয় বছর ধরে ফুসফুসে পানি জমার অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু সংগীত যার প্রাণ সে মানুষটি একদিনের জন্য তার সুরকে ত্যাগ করেননি। স্টেজে যখনই উঠতেন গলা ছেড়ে গাইতেন। তাঁর ম্যাডি ভক্তরাও গলা মিলিয়ে চিৎকার করে গেয়ে উঠতেন। সহজ কথায় আর আবেগ জড়ানো সুরে প্রত্যেকটি গানের সুর কথা গেঁথে দিয়ে গেছেন তিনি আজীবনের জন্য।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে তিনি নিজ বাসায় ঢাকায় মারা যান। মৃত্যুর মাত্র দুইদিন আগেও রংপুরে তাঁর শেষ অনুষ্ঠান করেছিলেন। সঙ্গীতের উত্থান থেকে সোনালী সময় ঢাকায় থাকলেও চট্টগ্রাম ছিল তার আপন শহর। মৃত্যুর পর তাঁকে চট্টগ্রামের চৈতন্য গলিতে পারিবারিক কবরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
প্রিয় ব্যান্ড এল আর বির সঙ্গে ছয়টি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার এবং একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন আইয়ুব বাচ্চু। ২০০৪ সালে বাচসাস পুরস্কার জিতেছিলেন সেরা পুরুষ ভোকাল বিভাগে। ২০১৭ সালে পান টেলে সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার জিতেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে আইয়ুব বাচ্চু তার বান্ধবী ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেছিলেন ১৯৯১ সালে। তাদের দুটি সন্তান আছে। মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব।
আইয়ুব বাচ্চু আজ নেই। কিন্তু এখনো তাঁর একটি গান কোথাও বাজলে আপনমনে প্রত্যেক তরুণ আনমনে গেয়ে ওঠে হাসতে দেখো/ গাইতে দেখো, সুখের এ পৃথিবী/ সুখের অভিনয়, বেলা শেষে ফিরে এসে পাইনি তোমায় কিংবা ভাঙা মন নিয়ে তুমি আর কেঁদো না’ র মতো অনেক গান। এভাবেই তিনি আজীবন ভক্তদের মুখে গানের সুরে বেঁচে থাকবেন ভালোবাসায়। শুভ জন্মদিন বাংলা ব্যান্ডের সর্বকালের কালপুরুষ আইয়ুব বাচ্চু।