নগরে ভেজাল মদ তৈরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্পিরিট, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, রঙ, সুগন্ধি, কোকাকোলা জাতীয় পানীয় ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এসব মদ তৈরি করে আসছিলেন।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলো- মো. নাছিম উদ্দিন (২৩), মো. ইকরামুল হক (৩২), স্বপন পাল (৫১), মো. ইমরান ফয়সাল (২১) ও জাহেদুর রহমান আরজু (৩০)। তাদের কাছ থেকে স্পিরিট, নকল লেভেল, ভেজাল মদ তৈরির বিভিন্ন রাসায়নিক ও বোতলের কর্ক জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এসব ভেজাল মদ খেয়ে সম্প্রতি তিন জনের মৃত্যুর পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নকল মদ তৈরির সঙ্গে যুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে সিএমপি’র উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, অনুমোদিত বিভিন্ন বার ও ক্লাব থেকে বিদেশি মদের খালি বোতল সংগ্রহ করে ভেজাল মদ ঢুকিয়ে নতুন লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় প্রতি বোতল ভেজাল মদ তৈরি করে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ভেজাল মদ শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করছে।
তিনি বলেন, গত ১৪ আগস্ট আকবরশাহ থানাধীন মালিপাড়া এলাকায় ভেজাল মদপানে বিশ্বজিৎ মল্লিক, শাওন মজুমদার জুয়েল ও উজ্জ্বল বণিক নামের তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার বিস্তারিত তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গত ১৩ আগস্ট বিশ্বজিৎকে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে মদ সরবরাহ করে নাছিম, যে মদ পান করে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নাছিমসহ আরো কয়েকজনের চট্টগ্রাম শহরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে, যারা বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল মদ তৈরি করে বিক্রি করে আসছে।
তথ্য নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে নগরের আকবরশাহ থানার কৈবল্যধাম রেলগেইট সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি নকল বিদেশি মদের বোতলসহ নাছিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নাছিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ তৈরির সরঞ্জাম, কেমিক্যাল, স্টিকার/লেবেল, কৃত্রিম রঙ, বিদেশি মদের খালি বোতল উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে নগরের আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিদেশি মদের স্টিকার প্রস্তুতকারী ও স্প্রিড সরবরাহকারী আরো চার ব্যক্তিকে।
ফারুক উল হক বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তার মানে এই নয় যে, চট্টগ্রাম শহরে এরাই একমাত্র ভেজাল মদ তৈরি ও বিক্রি করে। আরও চক্র থাকতে পারে। মানুষের জীবন রক্ষায় ভেজাল মদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক অভিযান চালাব।
আটক পাঁচজনকে আকবরশাহ এলাকায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উপকমিশনার (সিটি এসবি) আবদুল ওয়ারিশ খান, পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার পঙ্কজ বড়ুয়া ও আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।