হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে সোয়া তিন কিলোমিটার দূরের জনপদ সন্দ্বীপপাড়া। প্রায় আড়াই হাজার পরিবার সমৃদ্ধ ওই জনপদের অবস্থান হাটহাজারী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে।
প্রায় ২২ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সন্দ্বীপপাড়ায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা গড়ে বেসরকারি একটি সংস্থা। ‘সন্দ্বীপ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটিই এখানকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তবে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ওই সংস্থাটি হঠাৎ স্কুলটিতে অর্থায়ন বন্ধ করে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। এরপর থেকে স্কুলটি ক্রমাগত জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হতে হতে প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠে। কমতে কমতে বর্তমানে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৬-তে ঠেকেছে। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। তাও তাদের বেতন নেই! কিছু তরুণ ছেলেমেয়ে আর একজন প্রবীণ শিক্ষক মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে কোনোরকমে স্কুলটি টিকিয়ে রেখেছেন।
২০১৯ সালের প্রথমদিকে এ ঘটনা জানতে পেরে জরাজীর্ণ স্কুলটি পরিদর্শনে যান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন। ওইদিন তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্কুলটির উন্নয়নে সহায়তার।
এরপর থেকে স্কুলটির উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ইউএনও। গত তিন মাস ধরে কাজ চলছে পৌরসভার ওই জরাজীর্ণ স্কুলটিকে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার।
ইতোমধ্যে পুরো স্কুলটি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। দরজা-জানালা থেকে শুরু করে দেয়াল-ছাদ সবকিছুই এখন নতুন।
উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে স্কুলটির তিনটি শ্রেণিকক্ষই এখন পুরোপুরি নতুন। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে এখন রয়েছে নতুন বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক পাখা ও নতুন ব্ল্যাকবোর্ড!
আবার শিক্ষকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পৃথক শিক্ষক মিলনায়তন। দিনের প্রাত্যাহিক সমাবেশ জন্য দেওয়া হয়েছে ফ্লাগস্ট্যান্ডসহ নতুন জাতীয় পতাকা।
আগে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো টয়লেট ছিল না। অনেক ছাত্রী স্কুলে আসতে চাইত না শুধু টয়লেট না থাকার কারণে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা দূর করতে তৈরি করা হয়েছে উন্নতমানের পাকা টয়লেট।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের পরিবেশ মনোরম করতে চারপাশে দেওয়া হয়েছে টিনের বেড়া। খেলাধুলা করার জন্য সামনের মাঠটি উপযোগী করে তৈরি করা হয়। শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির জন্য বসানো হচ্ছে গভীর নলকূপ।
শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই স্কুলটির। শুধু আসা-যাওয়ার ভাড়া হিসেবে প্রতীকী এক হাজার টাকা ইউএনও’র পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রতি মাসে দেওয়া হবে! যেটা আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও রুহুল আমিন জয়নিউজকে বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে খবর পেয়ে স্কুলটিতে গিয়ে অবাক হই। যে সময় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন সে সময়ে এমন একটি প্রাইমারি স্কুল থাকতে পারে ভাবাই যায় না। তাই ওইদিন থেকেই বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা হাতে নিই।
তিনি আরও বলেন, সন্দ্বীপপাড়া এলাকায় বসবাসরত পরিবারের অনেকেরই টাকা দিয়ে শিশুকে স্কুলে ভর্তি করানো কিংবা বেতন দিয়ে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য নেই। কারণ তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক, কেউ গার্মেন্টসকর্মী, কেউ বর্গাচাষি, আবার কেউ পরের বাসায় কাজ করেন।
এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় ইউএনও আকস্মিক পরিদর্শনে যান ওই স্কুলটিতে। সঙ্গে নিয়ে যান এক ট্রাক বেঞ্চ (১১ জোড়া)। ইউএনও’র এই সারপ্রাইজ উপহার পেয়ে হাততালি দিতে থাকেন শিশু শিক্ষার্থীরা। ইউএনর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিনা খানমসহ শিক্ষকরা। ওইদিন ইউএনও নতুন ভর্তি হওয়া দুই শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বইও তুলে দেন।