লক্ষ্মীপুরে টাকার জোরের কাছে পরাজিত হয়েছে শিশুর যন্ত্রণা। শিক্ষকের পিটুনিতে অজ্ঞান থাকা শিশুটির তিন দিন পর জ্ঞান ফিরেছে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান।
জানা যায়, ২৫ আগস্ট শিক্ষকের বেদম মারধরে অচেতন হয়ে পড়ে আলেকজান্ডার সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান।
তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭ আগস্ট ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার জ্ঞান ফিরে আসে।
এ ঘটনায় বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে ওই শিক্ষার্থীর মা রাবেয়া বেগম রামগতি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে শিক্ষার্থীর চিকিৎসা খরচ দিতে রাজি হওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন রাকিবুলের মা!
অথচ এর আগে এ ঘটনার বিচার চেয়ে তার মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছেও আবেদন করেন। এরমধ্যে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক বদরুল আলমকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, টাকার জোরের কাছে হার মেনেছে শিশুর যন্ত্রণা। তবে এতকিছু ভাবতে নারাজ শিশু রাকিবুলের মা। তার সোজা কথা, আমার সন্তান তিনদিন অচেতন থাকার পর এখন কথা বলতে পারছে, এতেই আমি খুশি।
এদিকে অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক বদরুল আলমকে পুলিশ আটক করলেও দুই ঘণ্টা পর তিনি মুক্তি পেয়ে যান।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষক বদরুল আলম জয়নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী রাকিবুলকে ঘিরে যা হয়েছে, তা মিটে গেছে।
শিক্ষার্থী রাকিবুল তার ছাত্র উল্লেখ করে বদরুল বলেন, চিকিৎসায় খরচ যা লাগবে তা তিনি মিটিয়ে দিবেন। বিষয়টি শিক্ষার্থীর মা রাবেয়া বেগম মেনে নিয়েছেন।
এদিকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের চিকিৎসক মঈনুল সরকার জানিয়েছেন, রাকিবুলের অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক জয়নিউজকে বলেন, স্কুলছাত্র রাকিবুল হাসানের মা থানায় জিডি করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীর বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক বদরুল আলমকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইউএনও।
অপরদিকে রাকিবুলের সহপাঠীরা জানায়, রাকিবুল রোববার সকালে কোচিং ক্লাস করতে স্কুলে যায়। ক্লাস চলাকালে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলায় শিক্ষক বদরুল আলম তাকে মারধর করে বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে রাখেন। এতে অচেতন হয়ে পড়ে সে। সেখানে জ্ঞান না ফেরায় তাকে নোয়াখালী এবং পরে ঢাকায় নেওয়া হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে শ্রেণি পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিনই ক্লাস বর্জন করে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল জয়নিউজকে বলেন, ঘটনা তদন্তে শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।