যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়াকে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ রায় দেন।
চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০১১ সালে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় বিধান বড়ুয়াকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলার মেলুয়া এলাকা থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন বিধান বড়ুয়া। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার রাউজানের পূর্ব গুজরার বাড়ি থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে বুধবার ১০ বছরের সাজা দেয় আদালত। রাউজানে তিনটি হত্যা মামলাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিধান বড়ুয়ার বাড়ি রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধারমানিক বড়ুয়াপাড়ায়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিধান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন ওরফে রাজুর হাতে তার রাজনীতির হাতেখড়ি।
আকতার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিধানের বিরুদ্ধে একটি চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আকতার চেয়ারম্যান তাকে শাস্তি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিধান আকতার হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। নব্বইয়ের দশকে বিধান জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পরে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) গঠন করলে বিধানও ওই দলে যোগ দেন। সাকা চৌধুরীর প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বিধান বড়ুয়া। রাউজানে গঠন করেন বিধান বাহিনী। পুরো রাউজান জুড়ে শুরু করে ত্রাসের রাজত্ব।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৩ সালে খুন করেন তার রাজনৈতিক গুরু পূর্ব গুজরার ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনকে। এরপর তার হাতে একে একে প্রাণ হারান মোহাম্মদ মিয়া, মোহাম্মদ নাছিম, কৃষ্ণ দত্ত, ধনা বৈদ্য, ইকবাল, জামিল, মোহরম আলী, সোহেল, লিটন, ইউসুফ মাস্টার, মোহাম্মদ রফিকসহ রাউজানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ১২ নেতাকর্মী।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ শুরু হলে গা ঢাকা দেয় বিধান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বিধান বড়ুয়া রাউজান ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০১১ সালে ১০ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছেন তিনি।
জয়নিউজ/এফও/এফএম/জেডএইচ