শোকের মাসের শেষ দিন, ৩১ আগস্ট মধ্যরাত। ঠিক এ সময়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। আবাসিক হল দখলকে কেন্দ্র করেই তাদের এই সংঘর্ষ। যাতে আহত হন অন্তত পাঁচজন।
এদিকে এ ঘটনার রেশ ধরে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া একটি গ্রুপ ‘বিজয়’। ইতোমধ্যে তারা কেটে নিয়েছে ট্রেনের হোসপাইপ। সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে চবি শিক্ষকদের যাতায়াত করা বাসে। এ অবস্থায় একপ্রকার অচল হয়ে গেছে চবি।
শনিবার দিবাগত রাত বারটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া গ্রুপগুলোর মধ্যে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। অপর গ্রুপ ‘বিজয়’ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী গ্রুপ। উভয়পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
শনিবার রাতে আলাওল হলে বিজয় গ্রুপের সভা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী হলে বিজয় গ্রুপের রুম দখলে নেয় সিএফসির কর্মীরা। যা কিছুদিন আগে বিজয়ের দখলে ছিল। এসময় ‘বিরোধ মীমাংসা করতে’ সোহরাওয়ার্দী হলে এলে বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস মারধরের শিকার হন। এসময় রামদা দিয়ে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিজয় গ্রুপ।
পরে আলাওল হল থেকে বিজয়ের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের দিকে গেলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় এক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
মারধরের শিকার নেতার উপর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
সোহরাওয়ার্দী হলে মারধরের শিকার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ করেছে সিএফসি। তাদের দাবি, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাকে মারধর করা হয়েছে।
আহত যারা
মারধর ও সংঘর্ষ মিলিয়ে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মী। আহতরা হলেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, পরিসংখ্যান বিভাগের মাহফুজুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওবায়দুর রহমান লিমন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রিয়াম রায় প্রান্ত ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নিলয় হাসান।
এদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ইলিয়াসকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিরা চবি মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
সংঘর্ষে জড়িয়ে ধর্মঘট
রাতে ‘হামলার শিকার’ হয়ে রোববার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট করছে বিজয়। সকালে বটতলী স্টেশন থেকে দুইজন লোকমাস্টারকে অপহরণ করে তারা। পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। শাটল ট্রেনের হোসপাইপও কেটে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে থাকা শিক্ষক বাসগুলোর চাকা পাংচার ও গাড়ির তালায় সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে তারা। এ অবস্থায় সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ইলিয়াস ভাই রুবেলকে বরণ করে নিতে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৫-৭ জন পেয়ে সিএফসি তাদেরকে মারধর করে। এসময় সভাপতিও সেখানে উপস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছিল তারাই গুলি করেছে। বিজয়ের ছেলেরা তো পরে বের হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আমাদের দাবি রুবেলকে বহিষ্কার করতে হবে। না হলে আমাদের অবরোধ চলবে।
ইলিয়াসের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ের এ নেতা বলেন, সে গত কমিটির পদধারী নেতা ছিল। তার ব্যাপারে এমন বক্তব্য মানানসই নয়৷ সে কিভাবে জঙ্গি হতে পারে!
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। সিএফসি গ্রুপের এই নেতা জয়নিউজকে বলেন, বিজয় গ্রুপের ইলিয়াস, ফারুক ও মাহফুজ পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। কমিটির শুরু থেকেই তারা ঝামেলা করে আসছে। আলাওল হল থেকে তারা গুলিও ছুঁড়েছে।
তিনি বলেন, ইলিয়াস নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত৷ আগে তার বড় বড় দাড়ি ছিল। এখন সেগুলো ছোট করেছে। আর গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি, শাটল ট্রেনে সে স্বশরীরে হিজবুত তাহরিরের পোস্টার টাঙিয়েছে। সে ক্যাম্পাসে এসেছেই ঝামেলা করার জন্য। ইলিয়াস ক্যাম্পাসে এলেই অস্ত্রে সয়লাব হয়।
তবে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী।
জয়নিউজ/নবাব/পিডি