কলেজপড়ুয়া জাবিন আরাফাত। মেলায় ঢুকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন গোলাপ, নয়নতারা, হাসনাহেনার চারা। স্টলে দাঁড়ানো বিক্রেতাকে করছেন নানা প্রশ্ন। তাঁর সব প্রশ্ন ছিল মূলত চারাগাছের যত্ন নিয়ে।
শুধু জাবিন নয়, নগরের কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামে সবুজমেলায় আসা প্রত্যেক বৃক্ষপ্রেমীর চোখেই রাজ্যের কৌতুহল। কেউবা হাতে লিস্ট দেখে দেখে চটপট কিনে নিচ্ছেন চারাগাছ। আবার কেউবা দেখেশুনে। তবে চারাগাছ কিনুন আর নাই কিনুন পুরো মেলা ঘুরে ঘুরে দেখছেন সবাই।
কথা হলো জাবিনের সঙ্গে। তিনি বললেন, এমন একটা সময় এই বৃক্ষমেলা হচ্ছে যখন পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন পুড়ছে। সারাবিশ্বে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা একটি প্রধান সমস্যা। আমাদের সুন্দর এ দেশটিকে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য বসবাসযোগ্য করে রেখে যেতে হলে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। তাই মেলা থেকে বেশকিছু ফুলের চারা নিলাম। কারণ মানুষের হৃদয় হচ্ছে ফুলের অন্তর আত্মা, ফুল মানুষের মন, ধ্যান-ধারণা বদলাতে সাহায্য করে।
এবারের মেলায় আর.এন.জে নার্সারী, পুষ্প কলি নার্সারী, পুষ্প নার্সারী, কসমো নার্সারী, নিউ কসমো নার্সারী, আরণ্যক নার্সারী, চন্দন নগর বনফুল নার্সারী, বাহাদুর নার্সারী, ফতেয়াবাদ নার্সারীসহ নগরের বিভিন্ন এলাকার নার্সারী স্টল সাজিয়েছে বিভিন্ন বৃক্ষের চারায়। এর মধ্যে মাঠের ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি খাবারের স্টল। এছাড়া মাঠের এককোণে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খাঁটি মধুর একটি স্টল।
সবুজমেলায় মধুর স্টল কেন- প্রশ্ন করতেই মধু বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, যেখানে পাওয়া যায় ফুলের ঘ্রাণ, সেখানে ছুটে চলে ভ্রমরের প্রাণ। এখানে গাছের চাহিদার পাশাপাশি মধুর চাহিদা ব্যাপক। আর ভেজালমুক্ত মধু যদি পাওয়া যায়, তবে কে না চাইবে কিনতে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পক্ষকালব্যাপী এই মেলা বেশ সাড়া ফেলেছে। বৃক্ষপ্রেমীদের বেশি ভিড় জমে বিকাল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভিড় করছে গাছের চারা কিনতে। দরদাম করেই সবাই চারা কিনছেন। দামে না মিললে ক্রেতারা ঢু মারছেন অন্য স্টলে। আবার এরমধ্যে অনেকেই যারা এসেছেন শুধু বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তারা হেঁটে হেঁটে ঘুরছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। আর পরিচিত হচ্ছেন অচেনা বৃক্ষের সঙ্গে।
কামাল হোসেন নামে এক স্টলের বিক্রেতা জানান, কম দামে বেশি বিক্রি হয় ফলজ চারা গাছগুলো। সর্বনিম্ম ২০ টাকা থেকে শুরু এই চারাগাছের দাম। দেড়শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যে চারাগাছগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে আমাদের লক্ষ্য শুধু বিক্রি নয়। মানুষ ও গাছের মধ্যে যে অফুরন্ত ভালোবাসার সম্পর্ক তা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের নার্সারির প্রচারও আমাদের লক্ষ্য।
মেলায় কম দামে বেশি বিক্রির মধ্যে ফলজ চারাগাছগুলো হলেও বেশি দামে কম বিক্রি গাছ হলো বনসাই বা বামন গাছ। এই বনসাই বা বামন একটি শিল্প যার সূচনা ২০০০ বছর পূর্ব থেকে। বৃহৎ আকারের একটি বৃক্ষকে ক্ষুদ্র রূপ দেওয়ার এ নিরন্তর কারুশিল্প ফুটে উঠে প্রকৃতির অন্য এক সৌন্দর্য।
প্রসঙ্গত, ‘সবুজের সাথে পথ চলা, সবুজে সাজবে চট্টলা’ শ্লোগানে এই মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তিলোত্তমা চট্টগ্রামের সহায়তায় ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ মেলা।